সাম্প্রতিক গবেষণায় অটিজম চিকিৎসার নতুন পথ
সাম্প্রতিক গবেষণায় অটিজম চিকিৎসার নতুন পথ
অটিজমে আক্রান্ত শিশুদের পিতা মাতা ছাড়া পৃথিবীর কেউ বুঝবে না এই রোগের কষ্ট কতোটা। এটা এমন এক ধরনের রোগ যা রুগী নিজেও বুঝে না আর আশেপাশের যার বুঝে তারাও কিছু করতে পারে না। দুই পক্ষই অসহায় হয়ে পড়ে। এই সমস্যা নিয়ে অনেক প্রতিষ্ঠান দীর্ঘ দিন থেকে অক্লান্ত পরিশ্রমে গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছে। সাম্প্রতিক প্রকাশিত হওয়া গবেষণায় পাওয়া বিষয়গুলো তুলে ধরা হলো।
অটিজম
বহির্বিমুখিতা বৈচিত্রতার রোগ (ASD বা Autism Spectrum Disorder) একটি মানসিক বিকাশগত রোগ। এই রোগের লক্ষণ শিশুকালেই ধরা পড়ে। এই রোগে আক্রান্তরা অন্যদের থেকে একটু আলাদা হয়ে থাকে। এরা সাধারণত একা থাকতে পছন্দ করে, তবে যা করে খুব মনোযোগ সহকারে করে। এই রোগ সবার ক্ষেত্রে এক মাত্রার হয় না, একেক জনের ক্ষেত্রে একেক রকম হয়ে থাকে। এই বিষয়টিকে আরো বিশদভাবে জানার জন্য অনেক প্রতিষ্ঠান দীর্ঘদিন থেকে গবেষণা করে আসছে।
গবেষণায় নতুন পাওয়া তথ্য
৩ জুলাই ২০২৫, ইউসি স্ক্যান ডিয়েগো এবং সিমনস ফাউন্ডেশন অটিজম রিসার্চ ইনিশিয়েটিভ সম্মিলিতভাবে বহির্বিমুখিতার (autism) ৪টি নতুন উপ-ধরন প্রকাশ করেছে। সাম্প্রতিক প্রকাশিত এই গবেষণার দ্বারা অটিজম চিকিৎসার নতুন পথ হয়ত পাওয়া যাবে। কয়েক হাজার শিশুর জন্মগত জিনের নকশা ও বাহ্যিক আচরণ বিশ্লেষণ করে উপ- ধরনগুলো চিহ্নিত করেছে। উপ ধরন গুলো সম্পর্কে নিচে আলোচনা করা হলো :-
উপ ধরন ১ : সামাজিক এবং আচরণগত পরিস্থিতির সীমিত মোকাবেলা
ভুমিষ্ঠ হবার পর থেকে সময় পার হবার সাথে সাথে প্রকাশিত হয়ে থাকে এই উপ ধরন এর উপসর্গ গুলি। এই উপ ধরনের ক্ষেত্রে সাধারণত অন্যান্য সাধারণ বিকাশে কোনো সমস্যা হয় না। যেমন :- কথা বলার বয়স, হাঁটার বয়স। এই উপ ধরনের বৈশিষ্ট্য গুলো হলো :-
- মানসিক চাপ বা দুশ্চিন্তার ছাপ দেখা যায়
- আশেপাশের মানুষের সাথে ঠিকভাবে যোগাযোগে করতে পারে না
- কথা বলা বা শোনার সময় বক্তা বা শ্রোতার চোখের দিকে তাকায় না
- বিরক্ত না হয়েই একই কাজ একই সময়ে বার বার করে। যেমন :- একই প্রশ্ন বার বার করে।
উপ ধরন ২ : সামাজিক, আচরণগত পরিস্থিতির সীমিত মোকাবেলা এবং বিকাশগত বিলম্ব তার মিশ্রন
এই উপ ধরন এর শিশুরা সাধারণত উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া কিছু বিরল বৈচিত্রগত জিন বহন করে থাকে। এই উপ ধরনের শিশুদের মধ্যে উপ ধরন ১ এর সব বৈশিষ্ট্য থাকে সঙ্গে বিকাশগত বিলম্ব যোগ হয় মানে এদের কথা বলতে বা হাঁটতে অন্যান্য শিশুর চেয়ে বেশি সময় লেগে যায়।
উপ ধরন ৩ : ভিত্তিরেখা বা অল্প মোকাবেলা
এই উপ ধরনের মধ্যে খুব অল্প পরিমাণে বৈশিষ্ট্য দেখা যায়। বিকাশগত কোন ত্রুটি পাওয়া যায় না, মানে সঠিক সময়েই হাঁটতে বা কথা বলতে পারে। আচারণগত সমস্যা ও উল্লেখ করার মতো বেশি পাওয়া যায় না। আবার জিনের বংশগত বৈচিত্রও খুব কম পরিমাণে পাওয়া যায়। তাই এই উপ ধরনকে অন্যান্য উপ ধরন কে চিহ্নিত বা আলাদা করার ভিত্তি রেখাও বলা হয়।
উপ ধরন ৪ : গুরুতর আক্রান্ত
এই উপ ধরন সবচেয়ে বেশি জটিল হয়ে থাকে। এই সব শিশুদের মধ্যে সব বৈশিষ্ট্য ই তীব্র হয়ে থাকে। বিকাশগত জটিলতা অনেক বেশি হয়ে থাকে। এই উপ ধরনে আক্রান্ত শিশুরা সাধারণত একেবারে হাঁটতে পারে না বা একেবারে কথা বলতে পারে না। এই ধরনের শিশুদের জন্মগত জিন বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় এসব জিন উত্তরাধিকার সূত্রে পায়নি বরং হঠাৎ করে জিনগত পরিবর্তন হয়েছে। যাকে মেডিকেলের ভাষায় ডি নোভো পরিব্যক্তি (mutation) বলা হয়। এই সব শিশুদের মস্তিষ্কের বিকাশ খুব কম পরিমাণে হয়ে থাকে। মানসিক অবস্থাও খুব খারাপ হয়ে থাকে। আশেপাশের মানুষের সাথে কোন প্রতিক্রিয়া দেখাতেও ব্যর্থ হয়।
উপসংহার
বহির্বিমুখিতা রোগ নির্ণয়ের কোনো মাধ্যম নেয়। কোনো চিকিৎসা নেই। এই রকম গবেষণা চলতে থাকলে আমরা এই রোগের আরো ধরন বৈশিষ্ট্য খুঁজে বের করত পারবো । তখন চিকিৎসা করা সহজ হয়ে যাবে। আশা করা যায় নিকট ভবিষ্যতে অটিজম চিকিৎসার নতুন পথ খুলে যেতে পারে।