ডায়াবেটিক রেটিনোপ্যাথি কি? কারণ, লক্ষণ ও চিকিৎসা
ডায়াবেটিক রেটিনোপ্যাথি কি? কারণ, লক্ষণ ও চিকিৎসা
ডায়াবেটিস শুধু রক্তের গ্লুকোজকেই প্রভাবিত করে তা নয়। বরং শরীরের প্রত্যেকটা অঙ্গকেই প্রভাবিত করে। ডায়াবেটিক রেটিনোপ্যাথি তার একটা ভয়ঙ্কর রূপ। এটি হলে রেটিনার রক্তনালী গুলো ক্ষতিগ্ৰস্থ হয়। শুরুতে কোনো উপসর্গ না থাকলেও শেষ পর্যন্ত অন্ধত্ব ডেকে আনতে পারে। চলুন জেনে নেওয়া যাক ডায়াবেটিক রেটিনোপ্যাথি কি, কেন হয়, লক্ষণ কি কি দেখা যায় এবং এর চিকিৎসা কি।
সংজ্ঞা
রেটিনোপ্যাথি বলতে চোখের রেটিনার রক্তনালীর যে কোনো সমস্যা কে বোঝায়।আর ডায়াবেটিক মানে ডায়াবেটিস।তাহলে সারাংশ দাঁড়ালো ডায়াবেটিসের কারণে চোখের রেটিনার রক্তনালীর যে কোন ক্ষতিকেই ডায়াবেটিক রেটিনোপ্যাথি বলে। এটা হতে পারে টিস্যুর ক্ষতি বা রক্তক্ষরণ। যখন কোন মানুষের দীর্ঘদিন থেকে রক্তে অনিয়ন্ত্রিত চিনি থাকে। শরীর তার সাম্যাবস্থা হারিয়ে ফেলে তখন রেটিনার ক্ষতি হয়। দীর্ঘ দিন এইভাবে অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস থাকলে রেটিনার কোষ ধ্বংস হয়ে যায় ফলে মানুষ অন্ধত্ব বরণ করে। যা একটা না ভালো হবার মতো রোগ। অথচ প্রথম দিকে এই রোগের তেমন কোনো উপসর্গ থাকে না। মধ্যম পর্যায়ে দৃষ্টি শক্তি কমে যায়।শেষ পর্যায়ে চোখ অন্ধ হয়ে যায়। তাই ডায়াবেটিস হলে নিয়মিত চোখ পরীক্ষা করা উচিত ।
রেটিনা কি
রেটিনা হলো চোখের কোটরের শেষ অংশের সবচেয়ে বেশি আলো সংবেদনশীল স্থান।রেটিনার অবস্থান
আমরা চোখের সামনে যখন কোনো কিছুকে দেখি মানে সেই বস্তু থেকে আলো বিচ্ছুরিত হয়ে চোখের পাঁচটি অংশ ভেদ করে তারপর স্নায়ুতে পৌঁছায়। পাঁচটি অংশ হলো :-- কর্ণিয়া
- একুয়াস হিউমার
- লেন্স
- ভিট্রিয়াস হিউমার
- রেটিনা
রেটিনা হলো সর্বশেষ অংশ। এর পরেই আলো স্নায়ুর মাধ্যমে মস্তিষ্কে পৌঁছায়।
শ্রেনীবিভাগ
ডায়াবেটিক রেটিনোপ্যাথি তীব্রতার ভিত্তিতে ২ ভাগে ভাগ করা যায়। যথা :-অবর্ধিষ্ণু (Non-Proliferative) ডায়াবেটিক রেটিনোপ্যাথি
একে প্রাইমারী ডায়াবেটিক রেটিনোপ্যাথিও বলে। এটি এই প্রাথমিক বা শুরুর ধাপ। এই পর্যায়ে চোখের রক্তনালী ক্ষতিগ্ৰস্থ হয়। চোখের রক্তনালী নতুন ভাবে তৈরি হয় না। সাধারণত কোনো উপসর্গ থাকে না। এই পর্যায়ে চোখের দৃষ্টিশক্তি কমে যায়। কিছু বিশেষ পরিবর্তনের জন্য এই ধাপকে আবার ৩ ভাগে ভাগ করা হয়। যথা :-- মৃদু : রক্তনালীগুলো অল্প ফুলে যায়।
- মাঝারি : রক্ত নালীগুলো এমনভাবে ফুলে যায়, যার ফলে রক্ত ও অক্সিজেন সরবরাহে বাধাগ্ৰস্থ হয়।
- তীব্র : অক্সিজেন সরবরাহে বাধাগ্ৰস্থ হওয়ায় প্রচুর পরিমাণে রক্তনালী বৃদ্ধির প্রস্তুতি শুরু হয়।
বর্ধিষ্ণু (Proliferative) ডায়াবেটিক রেটিনোপ্যাথি
একে এডভান্সড (advanced) ডায়াবেটিক রেটিনোপ্যাথিও বলে। এটি একটি গুরুতর রোগ। এই ধাপে রক্তনালীগুলো বন্ধ হয়ে যায়। যার ফলে অস্বাভাবিকভাবে অনেক পরিমাণে নতুন রক্তনালী তৈরি হয়। যা রক্তনালীর স্বাভাবিক পথে না গিয়ে অস্বাভাবিক পথে যায়। কখনো কখনো ভিট্রিয়াস হিউমারের মধ্যে দিয়ে চলে যায়। কিন্তু নতুন রক্তনালী গুলোর দেয়াল গুলো মজবুত হয় না পুরাতন গুলোর মতো। এই অস্বাভাবিক বৃদ্ধির ফলে অনেক সময় মস্তিস্ক থেকে চোখের স্নায়ুর সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। এর ফলে গ্লুকোমা নামক রোগ তৈরি হয়। এই ধাপের শেষ হয় অন্ধত্ব দিয়ে।কারণ
ডায়াবেটিক রেটিনোপ্যাথির কারণসমূহ নীচে দেওয়া হল :-অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস
ডায়াবেটিক রেটিনোপ্যাথির প্রধান এবং অন্যতম কারণ হলো ডায়াবেটিস। অনেক ধরে শরীরে ডায়াবেটিস বাসা বেধে থাকলে প্রায় ২০ বছর। রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা অনিয়ন্ত্রিত থাকলে এই রোগ হতে পারে।রক্তনালীর ক্ষতি
রক্তনালীর দেয়াল কোনভাবে ক্ষতিগ্ৰস্থ হলে রক্তের উপাদান সমুহ দেয়ালের ভিতরে মানে নালীতে থাকে না বের হয়ে যায়। তার চারপাশে রক্ত জমাট বেধে যায়। কোনো রক্তনালীর দেয়াল ফেটে গেলেও এই রোগ হতে পারে।বৃদ্ধির কারণে
রক্তে রক্তচাপ ও কোলেস্টেরল বেড়ে গেলে রেটিনোপ্যাথি হতে পারে।অস্বাস্থ্যকর জীবন পদ্ধতি
ধূমপান করলে, নিয়মিত ব্যায়াম না করলে, পুষ্টিকর খাবার না খেলে এই রোগ হতে পারে।গর্ভাবস্থা
ডায়াবেটিক আক্রান্তরা গর্ভবতী হলে ডায়াবেটিক রেটিনোপ্যাথি হতে পারে।লক্ষণ
ডায়াবেটিক রেটিনোপ্যাথি আক্রান্ত দের প্রাথমিক অবস্থায় কোন লক্ষণ থাকে না। তবে রোগের তীব্রতা বাড়লে কিছু লক্ষণ দেখা যায়। যথা :-- ঝাপসা বা ঘোলাটে দেখা
- দৃষ্টি ক্ষেত্রের মধ্যে দাগ বা অন্ধকার দেখা
- রাতের বেলা দেখতে অসুবিধা হওয়া
- সোজা লাইন সোজা না দেখা
- দেখার ক্ষমতা কমে যাওয়া
- চোখে চাপ বা ব্যথা হওয়া
- আলোর সংবেদনশীলতা বেড়ে যাওয়া
- স্বাভাবিক রং চিনতে না পারা
- চোখ লালচে হওয়া
- হঠাৎ দেখতে না পাওয়া বা অন্ধকার দেখা
কারা বেশি ঝুঁকিতে
যারা ডায়াবেটিক রেটিনোপ্যাথির ঝুঁকিতে বেশি থাকে তাদের বর্ণনা নিচে দেয়া হল :-ডায়াবেটিসে আক্রান্ত
যারা দীর্ঘদিন ধরে ডায়াবেটিস রোগে আক্রান্ত। যাদের রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা অনিয়ন্ত্রিত থাকে তারা।রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম
যাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম তারা।উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত
যাদের শরীরে রক্তচাপের মাত্রা বেশি তারা। কারণ রক্তের উচ্চ চাপ সরাসরি চোখের রক্তনালীতে প্রভাব ফেলে।গর্ভবতী নারী
গর্ভবতী নারীদের শরীরে নানা রকম হরমোন নিঃসরণ হয় যা চোখের রক্তনালীতে প্রভাব ফেলে। বিশেষ করে যেসব গর্ভবতী নারী গর্ভবতী নারী গর্ভাবস্থার আগে থেকেই ডায়াবেটিসে আক্রান্ত তারা রেটিনোপ্যাথীতে বেশি আক্রান্ত হতে পারে।জন্মগত কারণ
অনেকে জন্মগত ভাবেই এই রোগের জিন বহন করে থাকে। তারা ঝুকিতে থাকে।উচ্চ কোলেস্টেরল
যাদের রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা বেশি থাকে। তারা ঝুঁকিতে থাকে। চোখের রক্তনালী গুলোতে কোলেস্টেরল জমে বাধার সৃষ্টি করে।ধূমপায়ীরা
যারা ধূমপান করে থাকে ও ডায়াবেটিস থাকে, তারা ডায়াবেটিক রেটিনোপ্যাথি হবার ঝুঁকিতে থাকে।মোটা ব্যক্তিরা
মোটা ব্যক্তিদের ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্সি বেশি থাকে এর ফলে রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা বেড়ে যায়। ডায়াবেটিস বেড়ে গেলে রেটিনোপ্যাথী হবার প্রবণতাও বেড়ে যায়।প্রতিরোধের উপায়
রক্তের গ্লুকোজ কমানো
রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা বেড়ে যাওয়াকেই ডায়াবেটিস বলে। ডায়াবেটিস বেড়ে গেলে বা সব সময় নিয়ন্ত্রনের বাইরে থাকলে ডায়াবেটিক রেটিনোপ্যাথি হবার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। তাই কোন রকম উপসর্গ না থাকলেও নিয়মিত রক্তের গ্লুকোজ মাপা উচিত। গ্লুকোজের মাত্রা বেশি হলে স্বাভাবিক মাত্রায় সব সময় রাখা দরকার। গ্লুকোজের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকলে ডায়াবেটিক রেটিনোপ্যাথী হবার সম্ভাবনা কমে যায়।উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রন
অনিয়মিত জীবনযাপন, খাদ্য অভ্যাস, অপরিমিত ঘুমের ফলে রক্তচাপ বেড়ে যায়। রক্তের চাপ বেড়ে গেলে রেটিনার রক্তনালী গুলোতে চাপ বেড়ে যায়। তাই নিয়মিত রক্তচাপ মাপা উচিত। রক্তচাপ বেশি থাকলে স্বাভাবিক সীমার মধ্যে এনে উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রন করা দরকার এতে রেটিনোপ্যাথি প্রতিরোধ সম্ভব।নিয়মিত চোখ পরীক্ষা
সমস্যা না থাকলেও নিয়মিত বার্ষিক ভিত্তিতে চোখের রুটিন পরীক্ষা গুলো করানো দরকার। বিশেষ করে রেটিনা। এর ফলে রেটিনাতে সমস্যা থাকলে তা আগে থেকেই কিছু বোঝা যায়। প্রতিরোধের ব্যবস্থা নেয়া যায়।খারাপ কোলেস্টেরল কমানো
কম ঘনত্বের লাইপোপ্রোটিন (LDL) কোলেস্টেরলকে খারাপ কোলেস্টেরল বলে। এই কোলেস্টেরল বেড়ে গেলে চোখের রক্তনালীর রক্তচাপ বেড়ে যায়। সেজন্য এলডিএল কোলেস্টেরল সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া কমাতে হবে।তামাক জাতীয় দ্রব্য বর্জন
তামাক সেবন, গ্ৰহন করলে চোখের রক্তনালী সমুহের ক্ষতি হয়। তাই জীবন থেকে তামাক জাতীয় সকল দ্রব্য বর্জন করা দরকার। তামাক জাতীয় দ্রব্যের সবচেয়ে জনপ্রিয় মাধ্যম হচ্ছে ধূমপান। এছাড়া তামাক পাতা অনেকে সরাসরি গ্ৰহণ করে।এলকোহল বর্জন
এলকোহল চোখের রক্তনালীর ক্ষতি করে থাকে। এলকোহল নিয়মিত পানে পাকস্থলী, হার্ট, কিডনি, লিভারের স্বাভাবিক কার্যে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। তাই এলকোহল বর্জন করা দরকার।স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভাস
নিয়মিত পরিমিত পরিমাণে স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া দরকার। স্বাস্থ্যকর, পুষ্টিকর খাবার খেলে চোখ, রক্তনালী, চোখের কোষ ভালো থাকে।নিয়মিত ব্যায়াম
একজন প্রাপ্তবয়স্কের প্রতি সপ্তাহে ১৫০ মিনিট মধ্যম পরিশ্রমের ব্যায়াম করা উচিত। ব্যায়াম নিয়মিত করলে শরীর সুস্থ থাকে। হার্ট ভালো থাকে পরোক্ষ ভাবে চোখের রক্তনালীও সুস্থ থাকে।দুশ্চিন্তা দূর করা
সব সময় মানসিক দুশ্চিন্তা দূর করে ফুরফুরে থাকা দরকর। বেশি দুশ্চিন্তা করলে শরীর কর্টিসল নামক হরমোন নিঃসরণ করে, যা রক্তের গ্লুকোজের পরিমাণ বাড়িয়ে ডায়াবেটিস বাড়িয়ে ফেলে। তাই দুশ্চিন্তা মুক্ত থাকা দরকার।অবহেলা না করা
চোখের কোনো রকম সমস্যা বা দেখতে সমস্যা হলে অবহেলা না করে দ্রুত চিকিৎসকের কাছে যাওয়া উচিত।রোগ নির্ণয়ের পদ্ধতি
চক্ষু প্রসারণ পরীক্ষা (Dilated eye exam)
এই পরীক্ষায় চক্ষুর মণি প্রসারণ করে রেটিনার রক্তনালী সমূহ পরীক্ষা করা হয়। যেমন :- নতুন রক্তনালী তৈরি হয়েছে কিনা, ম্যাকুলা ফুলেছে কিনা, রক্তপাত হয়ে জমাট বেঁধেছে কিনা।রেটিনার ছবি তোলা (Fundus Photography)
এই পরীক্ষাতে বিশেষ ধরনের সুক্ষ্ম ক্যামেরার মাধ্যমে রেটিনার উচ্চ মানের ছবি তোলা হয়।আলোক সমন্বয়ক টমোগ্ৰাফী (Optical Coherence Tomography)
একে সংক্ষেপে OCT বলে। এটি এক ধরনের স্ক্যানার। যা খুব সুক্ষ্ম বিশ্লেষণের জন্য উপকারী। ম্যাকুলার মতো সুক্ষ্ম স্থানের স্তর ভিত্তিক ছবি প্রকাশ করে।রঞ্জক এনজিওগ্ৰাফী (Fluorescein Angiography)
এতে এক ধরনের রং রক্তনালীতে প্রবেশ করিয়ে ছবি তোলা হয়। রক্তনালী পরীক্ষা করার জন্য বিশেষ পরীক্ষা।দৃষ্টিশক্তি পরীক্ষা (Visual Acuity Test)
একে স্নেলেন পরীক্ষাও বলা হয়। এতে নির্দিষ্ট দূরত্বে কিছু অক্ষর, সংখ্যা চিহ্নিত করে চোখের দৃষ্টিশক্তি পরীক্ষা করা হয়।চিকিৎসা
রোগের অবস্থা বা তীব্রতা অনুসারে ডায়াবেটিক রেটিনোপ্যাথীর চিকিৎসা ভিন্ন হয়ে থাকে। নিচে বিস্তারিত দেওয়া হলো :-অবর্ধিষ্ণু (non proliferative) ডায়াবেটিক রেটিনোপ্যাথি
চোখ ভালো থাকলে দেখতে কোনো সমস্যা না হলে যত দ্রুত সম্ভব ডায়াবেটিস ও রক্তচাপকে সীমার মধ্যে নিয়ন্ত্রনে আনা। স্বাস্থ্যকর জীবন যাপন ও পুষ্টিকর খাবার খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তোলা।বর্ধিষ্ণু (Proliferative) ডায়াবেটিক রেটিনোপ্যাথি
রোগ খারাপ পর্যায়ে চলে গেলে বা বর্ধিষ্ণু ধাপের হলে :-লেজার চিকিৎসা (Laser Photocoagulation Therapy)
এর মাধ্যমে রক্তনালীর ফেটে যাওয়া অংশ বন্ধ করতে বা নতুন রক্তনালী তৈরি হতে বাধা প্রদান করে।- কেন্দ্রীভূত লেজার (Focal Laser)
- সম্পূর্ণ রেটিনার লেজার (Pan retinal Laser)
সুঁই মাধ্যমে ওষুধ (Anti-VEGF Injections)
VEGF হচ্ছে এমন এক ধরনের প্রোটিন যা নতুন রক্তনালী তৈরিতে সাহায্য করে থাকে। কিছু ওষুধ যেমন :- Bevacizumab, Ranibizumab, Aflibercept সুঁইয়ের মাধ্যমে শরীরে প্রবেশ করিয়ে রক্তনালীর বৃদ্ধি রোধ করা হয়।ভিট্রিয়াসের ভিতরে স্টেরয়েড প্রয়োগ (Intravitreal Steroids)
Anti-VEGF ওষুধ কাজ না করলে তারপর এইসব স্টেরয়েড প্রয়োগ করা হয়। যেমন :-Dexamethasone implant,Triamcinolone acetonide. স্টেরয়েডকে বলা হয় জীবন রক্ষা কারী ওষুধ। স্টেরয়েডের অনেক পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া। তাই খুব সাবধানে দিতে হয়।ভিট্রিয়াস সরিয়ে ফেলা (Vitrectomy)
চোখের ভিট্রিয়াসের মধ্যে রক্ত জমাট বেঁধে থাকলে সাধারণত এই চিকিৎসা করা হয়।জটিলতা
ডায়াবেটিক রেটিনোপ্যাথিতে অনেক ধরনের জটিলতার সৃষ্টি হয়। যেমন :-রক্তপাত ঘটা
অবর্ধিষ্ণু রেটিনোপ্যাথির ক্ষেত্রে রক্তপাত না ঘটলেও বর্ধিষ্ণু রেটিনোপ্যাথির ক্ষেত্রে নতুন অনেক অস্বাভাবিক রক্তনালীর সৃষ্টি হয়। এর দেয়ালগুলো মজবুত না হওয়ায় রক্তের উপাদান গুলো রক্তনালীর বাইরে বের হয়ে আসে। নতুন রক্তনালী গুলো ভিট্রিয়াস হিউমারের মধ্যে প্রবেশ করলে। রক্তপাত হয়ে ভিট্রিয়াস হিউমার রক্তে পরিপূর্ণ হয়ে যেতে পারে।মস্তিস্কের সাথে বিচ্ছিন্নতা
নতুন রক্তনালী গুলো যদি স্নায়ুর চারপাশে অস্বাভাবিক ভাবে অনেক পরিমাণে বৃদ্ধি পেতে থাকে। তখন স্নায়ুর উপর অনেক চাপ পড়ে। এর ফলে মস্তিস্কের সাথে চোখের স্নায়ুর বিচ্ছিন্নতা ঘটতে পারে। অথবা স্নায়ুর চারপাশে বর্ধিত রক্তনালী থেকে রক্তের উপাদান বের হয়ে। রক্ত জমে যাওয়ার জন্য স্নায়ুতে চাপ পড়তে পারে এতে মস্তিষ্কের সাথে চোখের স্নায়ুর বিচ্ছিন্নতা ঘটতে পারে।গ্লুকোমা হওয়া
অস্বাভাবিক পরিমাণে নতুন রক্তনালী সৃষ্টি হবার ফলে চোখের ভেতরের তরলের চাপ বেড়ে যায়। তাছাড়া চোখের ভেতরের তরলসমুহের প্রবাহ পথে রক্তনালীর বৃদ্ধি ঘটলে তরলসমূহের চাপ বেড়ে যায়। চোখের ভেতরের তরলসমূহের এই চাপ বৃদ্ধি হওয়াকে গ্লুকোমা বলে। এই চাপ বৃদ্ধির ফলে চক্ষু কোটরের পিছনে থাকা স্নায়ুর উপর চাপ সৃষ্টি করে।ম্যাকুলার ফোলাভাব
রেটিনার কেন্দ্রে অবস্থিত অংশকে ম্যাকুলা বলে। এটি দেখার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ অংশ। নতুন নতুন রক্তনালী তৈরি হওয়ার ফলে রেটিনার ম্যাকুলা অংশটা ফুলে যায়। এই ফুলে যাওয়াকে ম্যাকুলা এডিমা বলে। ম্যাকুলা ফুলে গেলে দেখার সমস্যা সৃষ্টি হয়।চিরস্থায়ী অন্ধত্ব
অস্বাভাবিক রক্তনালীর বৃদ্ধি, ম্যাকুলার ফুলে যাওয়া, রক্তনালী থেকে রক্ত উপাদান বের হওয়া, চোখের অস্বাভাবিক স্থানে রক্ত জমে যাবার কারণে, গ্লুকোমার কারণে অপটিক স্নায়ুর উপর অত্যাধিক চাপ পড়ার ফলে এবং মস্তিষ্কের সাথে অপটিক স্নায়ুর বিচ্ছিন্নতার কারণে মানুষ স্থায়ীভাবে অন্ধ হয়ে যেতে পারে।কখন চক্ষু বিশেষজ্ঞের সাথে দেখা করবেন
ডায়াবেটিস থাকলে
ডায়াবেটিস অনিয়ন্ত্রিত থাকলে নিয়মিত চিকিৎসকের কাছে গিয়ে পরীক্ষা করা উচিত। দেখায় কোনো সমস্যা না থাকলেও কারণ এই রোগের নাম ডায়াবেটিস থেকেই এসেছে।গর্ভকালীন ডায়াবেটিস
গর্ভবতী মায়েদের ডায়াবেটিস থাকলে নিয়মিত চক্ষু বিশেষজ্ঞের কাছে যাওয়া উচিত। কারণ গর্ভাবতী মায়েদের ডায়াবেটিক রেটিনোপ্যাথী হবার প্রবণতা অনেক বেশি।দেখায় পরিবর্তন
দেখতে সমস্যা হলে যেমন :- ঝাপসা বা কম দেখলে অপেক্ষা না করে দ্রুত চিকিৎসকের কাছে যাওয়া উচিত ।দৃষ্টি ক্ষেত্রে দাগ
মানুষের ডান থেকে বাম পর্যন্ত দেখার একটা ক্ষেত্র রয়েছে। এই দৃষ্টি ক্ষেত্রের মধ্যে কোন দাগ দেখা গেলে দ্রুত চিকিৎসকের কাছে যাওয়া উচিত।
চিকিৎসার কার্যকারিতা নির্ভর করে কোন বিষয়ের উপর???- কোন পর্যায়ে, কোন অবস্থাতে, কত তীব্রতায় রোগ চিহ্নিত করা গেছে ও চিকিৎসা শুরু হয়েছে তার উপর
- রক্তে গ্লুকোজের মাত্রার উপর
- চোখের কোন বড় ধরনের সমস্যা হয়েছে কিনা তার উপর