সুস্বাদু কিন্তু অবহেলিত – কবুতরের মাংস বনাম প্রচলিত মাংস
সুস্বাদু কিন্তু অবহেলিত – কবুতরের মাংস বনাম প্রচলিত মাংস
কবুতরের মাংস ও অন্যান্য প্রানীর মাংসের মধ্যে তুলনা
প্রোটিন
আমাদের শরীরের ১৬-২০% প্রোটিন দিয়ে গঠিত। পেশির ৪৪%, ত্বকের ১৫% ও রক্তের ১০% প্রোটিন দ্বারা তৈরি।কোষ, ত্বক,হাড়,রক্ত পেশি,এনজাইম,হরমোন প্রোটিন এর তৈরি।হিমোগ্লোবিনের গ্লোবিন অংশটি প্রোটিন দ্বারা তৈরি। প্রধান বিপাকীয় হরমোন ইনসুলিন প্রোটিন দ্বারা গঠিত। কোষের ভিতরের বেশিরভাগ অংশ প্রোটিন। প্রোটিন ছাড়া শরীর অচল। প্রোটিন প্রতি গ্ৰাম খরচ করে ৪ ক্যালরি করে সরবরাহ করে শরীরকে। একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের দৈনিক প্রতি কেজি ওজন হিসেবে ০.৮-১.০ গ্রাম প্রোটিন খাওয়া উচিত। প্রোটিনের প্রধান উৎস প্রাণিজ প্রোটিন। প্রাণিজ প্রোটিনের অনেক উৎস রয়েছে। কবুতর হতে পারে উত্তম উৎস। বাড়িতে পালন করে প্রোটিনের চাহিদা পূরণ করতে পারি।চলুন জেনে নেওয়া যাক আমাদের চারপাশের প্রাপ্ত প্রাণিজ প্রোটিনের উৎস গুলোর সাথে কবুতরের মাংসের তুলনা। কোনটা থেকে কি পরিমাণে প্রোটিন পাওয়া যায়।
- প্রতি ১০০ গ্রাম কবুতরের মাংসে প্রোটিন থাকে ২৩-২৫ গ্রাম
- প্রতি ১০০ গ্রাম গরুর মাংসে প্রোটিন থাকে ২০–২২ গ্রাম
- প্রতি ১০০ গ্রাম সোনালী মুরগির মাংসে প্রোটিন থাকে ২১-২৩ গ্রাম
- প্রতি ১০০ গ্রাম ছাগলের মাংসে প্রোটিন থাকে ২০–২১ গ্রাম
- প্রতি ১০০ গ্রাম রাজহাঁসের মাংসে প্রোটিন থাকে ১৮–২০ গ্রাম
- প্রতি ১০০ গ্রাম মহিষের কাঁচা মাংসে প্রোটিন থাকে ২০–২২ গ্রাম
- প্রতি ১০০ গ্রাম চামড়াসহ পাতিহাঁসের মাংসে প্রোটিন থাকে ১৮–২০ গ্রাম
- প্রতি ১০০ গ্রাম ভেড়ার মাংসে প্রোটিন থাকে ২০–২৫ গ্রাম
- প্রতি ১০০ গ্রাম গাড়লের মাংসে থাকে ২১–২৪ গ্রাম
- প্রতি ১০০ গ্রাম ব্রয়লার মুরগির মাংসে থাকে ২৩–২৫ গ্রাম।
- প্রতি ১০০ গ্রাম কোয়েলের মাংসে থাকে ২০–২২ গ্রাম।
চর্বি
আমাদের সমাজে প্রচলিত হয়ে গেছে চর্বি মানেই খারাপ । কিন্তু ব্যাপার টা তা নয়। ছেলেদের ১৪-২০% এবং মেয়েদের ২৩-৩৫% চর্বি দ্বারা গঠিত। মেয়েদের চর্বি বেশি হবার কারণ গর্ভধারণ ও কিছু বিশেষ হরমোন উৎপাদন। বিভিন্ন হরমোন তৈরি, বিশেষ অঙ্গ যেমন কিডনি, লিভার সংরক্ষণ বা আঘাত রক্ষায় চর্বি অবদান রাখে। চর্বি শরীরের তাপীয় সাম্যাবস্থা বজায় রাখতে সাহায্য করে। ১ গ্ৰাম চর্বি প্রায় ৯ ক্যালরি শক্তি যোগান দেয়। ভিটামিন এ,ডি,ই,কে শরীরের গ্ৰহন উপযোগি করার জন্য চর্বি অত্যাবশকীয় উপাদান। চর্বি যেমন হার্টের রোগ বা মোটা হবার কারণ তেমনি ঘাটতি হলে হতে পারে দুর্বলতা ও হরমোনের সমস্যা। প্রতিদিন চাহিদা মাফিক মোট ক্যালরির ২০-৩০% চর্বি থেকে আসা দরকার এবং এটা ১৫% এর কম হলে স্বাভাবিক কার্যক্রমে বাধাগ্ৰস্থ হয়। আর শিশুদের ক্ষেত্রে নিম্নে ৩০-৪০% হওয়া বাধ্যতামূলক। দেখা যাক চর্বির ঘাটতি পূরনে কবুতরের মাংস কতটুকু এগিয়ে থাকে।
- প্রতি ১০০ গ্রাম কবুতরের মাংসে চর্বি থাকে ২-৪%
- প্রতি ১০০ গ্রাম গরুর মাংসে চর্বি থাকে ১০–১৫% (লালচে মাংস (Red meat) বা চর্বিযুক্ত মাংসে থাকে আরও বেশি)।
- প্রতি ১০০ গ্রাম সোনালী মুরগির মাংসে থাকে ৪-৭%
- প্রতি ১০০ গ্রাম ছাগলের মাংসে থাকে ৭–৯%
- প্রতি ১০০ গ্রাম রাজহাঁসের মাংসে ১৫–২৫% (চামড়াসহ রান্না করলে)
- প্রতি ১০০ গ্রাম মহিষের কাঁচা মাংসে থাকে ৮–১০%
- প্রতি ১০০ গ্রাম চামড়াসহ পাতিহাঁসের মাংসে থাকে ২৮–৩৫% (চামড়াসহ) চামড়া বাদ দিলে ৮–১০%
- প্রতি ১০০ গ্ৰাম ভেড়ার মাংসে থাকে ১৫–২০% (চর্বিযুক্ত অংশে ২৫%)
- প্রতি ১০০ গ্রাম গাড়লের মাংসে থাকে ১৫–১৮%
- প্রতি ১০০ গ্রাম ব্রয়লার মুরগির মাংসে থাকে ২–৫% ( চামড়াসহ হলে ৮–১০%)
- প্রতি ১০০ গ্রাম কোয়েলের মাংসে থাকে ৪–৬%।
আয়রন
মানবদেহে আয়রনের ঘাটতি হলে বেঁচে থাকাটা অনিশ্চিত হয়ে যায়। কারণ শরীরের অক্সিজেন বহনের মাধ্যম হিমোগ্লোবিনের প্রধান অংশ হিম বা আয়রন থেকে তৈরি। আবার পরিশ্রমের সময় পেশির কোষে অক্সিজেনের ধারক মায়োগ্লোবিন আয়রন থেকে তৈরি। মাইটোকন্ড্রিয়ায় শক্তি উৎপাদন হোক বা ইমিউন সিস্টেম হোক আয়রন জরুরি। মানবদেহে ২.৫-৪.৫ গ্রাম আয়রন পাওয়া যায়। তার ৬০-৭০% ভাগই থাকে হিমোগ্লোবিনে। একজন পুরুষের দৈনিক ৮ মিলিগ্ৰাম আয়রন নেয়া উচিত। আর মহিলাদের পরিস্থিতি ভেদে ১০-২৮ মিলিগ্ৰাম নেয়া দরকার। সবচেয়ে বেশি লাগে গর্ভবতী নারীর ক্ষেত্রে ২৮ মিলিগ্ৰাম। দেখা যাক এই দৌড়ে কবুতরের মাংস কোন অবস্থানে থাকে।
- প্রতি ১০০ গ্রাম কবুতরের মাংসে থাকে ৪.৫–৬.০ মিলিগ্রাম
- প্রতি ১০০ গ্রাম গরুর মাংসে থাকে ২.৫–২.৮ মিলিগ্রাম
- প্রতি ১০০ গ্রাম সোনালী মুরগির মাংসে থাকে ১.০–১.৪ মিলিগ্রাম
- প্রতি ১০০ গ্রাম ছাগলের মাংসে থাকে ৩.০–৩.৫ মিলিগ্রাম
- প্রতি ১০০ গ্রাম রাজহাঁসের মাংসে থাকে ২.৭–৩.২ মিলিগ্রাম
- প্রতি ১০০ গ্রাম মহিষের কাঁচা মাংসে থাকে ২.৩–৩.৫ মিলিগ্রাম
- প্রতি ১০০ গ্রাম চামড়াসহ পাতিহাঁসের মাংসে থাকে ২.৫–২.৭ মি.গ্রা
- প্রতি ১০০ গ্ৰাম ভেড়ার মাংসে থাকে ১.৮–২.১ মি.গ্রা
- প্রতি ১০০ গ্রাম গাড়লের মাংসে থাকে ২.০–২.৫ মি.গ্রা
- প্রতি ১০০ গ্রাম ব্রয়লার মুরগির মাংসে থাকে ০.৭–১.৩ মি.গ্রা
- প্রতি ১০০ গ্রাম কোয়েলের মাংসে থাকে ৪.৫–৫.০ মি.গ্রা।
জিঙ্ক
পুর্ণবয়স্ক মানুষের শরীরে ২-৩ গ্রাম জিংক থাকে। যার ৬০% পেশিতে ও ৩০% হাড়ে থাকে। শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে, ক্ষত নিরাময়ে,রুচি ঠিক রাখতে, চুল পড়া কমাতে, নখের স্বাস্থ্য বজায় রাখতে ভূমিকা রাখে। শিশুদের শারীরিক ও মানসিক বৃদ্ধি ঠিক রাখতে। বড়দের প্রজনন ক্ষমতা ও শুক্রানু তৈরিতে অবদান রাখে। এছাড়া শরীরের প্রায় ৩০০ এনজাইম তৈরিতে সাহায্য করে। একজন মানুষের দৈনিক ৮-১২ মিলিগ্ৰাম জিংক খাওয়া উচিত সুস্থ থাকতে। দেখা যাক এই ক্যাটাগরিতে কবুতরের মাংসের অবস্থান।
- প্রতি ১০০ গ্ৰাম কবুতরের মাংসে থাকে ২.৫–৩.৫ মিলিগ্রাম
- প্রতি ১০০ গ্ৰাম গরুর মাংসে থাকে ৪.৫–৫.০ মিলিগ্রাম
- প্রতি ১০০ গ্ৰাম সোনালী মুরগির মাংসে থাকে ১.৩–১.৮ মিলিগ্রাম
- প্রতি ১০০ গ্ৰাম ছাগলের মাংসে থাকে ৩.৫–৪.৫ মিলিগ্রাম
- প্রতি ১০০ গ্ৰাম রাজহাঁসের মাংসে থাকে ২.৮–৩.৫ মিলিগ্রাম
- প্রতি ১০০ গ্ৰাম মহিষের কাঁচা মাংসে থাকে ৪.৫–৫.২ মিলিগ্রাম
- প্রতি ১০০ গ্রাম চামড়াসহ পাতিহাঁসের মাংসে থাকে ২.৪–২.৮ মি.গ্রা
- প্রতি ১০০ গ্ৰাম ভেড়ার মাংসে থাকে ৪.০–৫.০ মি.গ্রা
- প্রতি ১০০ গ্রাম গাড়লের মাংসে থাকে ৪.৫–৫.৫ মি.গ্রা
- প্রতি ১০০ গ্রাম ব্রয়লার মুরগির মাংসে থাকে ১.০–১.২ মি.গ্রা
- প্রতি ১০০ গ্রাম কোয়েলের মাংসে থাকে ২.০–২.৫ মি.গ্রা।
সেলেনিয়াম
মানব দেহে ১৩-২০ মিলিগ্ৰাম সেলেনিয়াম পাওয়া যায়। সেলেনিয়াম এন্টিঅক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে, ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়, থাইরয়েডের হরমোন নিয়ন্ত্রন, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। এছাড়া শক্রানু উৎপাদনে, হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে, মানসিক চাপ দূর করতে সাহায্য করে থাকে। বয়সভেদে ৪০-৭০ মাইক্রোগ্ৰাম সেলেনিয়াম গ্ৰহণ করা উচিত। দেখা যাক কবুতরের মাংসের দৌড় সেলেনিয়ামের চাহিদা পূরণে।
- প্রতি ১০০ গ্ৰাম কবুতরের মাংসে থাকে ২৫–৩০ মাইক্রোগ্ৰাম
- প্রতি ১০০ গ্ৰাম গরুর মাংসে থাকে ২০–২২ মাইক্রোগ্ৰাম
- প্রতি ১০০ গ্ৰাম সোনালী মুরগির মাংসে থাকে ২০–২৪ মাইক্রোগ্ৰাম
- প্রতি ১০০ গ্ৰাম ছাগলের মাংসে থাকে ২৫–৩০ মাইক্রোগ্ৰাম
- প্রতি ১০০ গ্ৰাম রাজহাঁসের মাংসে থাকে ১৮-২৫ মাইক্রোগ্ৰাম
- প্রতি ১০০ গ্ৰাম মহিষের কাঁচা মাংসে থাকে ২০–২৮ মাইক্রোগ্রাম
- প্রতি ১০০ গ্রাম চামড়াসহ পাতিহাঁসের মাংসে থাকে ১৪–২৫ মাইক্রোগ্রাম
- প্রতি ১০০ গ্ৰাম ভেড়ার মাংসে থাকে ১৫–২০ মাইক্রোগ্রাম
- প্রতি ১০০ গ্রাম গাড়লের মাংসে থাকে ১৬–২২ মাইক্রোগ্রাম
- প্রতি ১০০ গ্রাম ব্রয়লার মুরগির মাংসে থাকে ২০–২৫ মাইক্রোগ্রাম
- প্রতি ১০০ গ্রাম কোয়েলের মাংসে থাকে ১৮–২২ মাইক্রোগ্রাম।
বি৩ (নিয়াসিন), বি৬ (পাইরিডক্সিন), বি১২ (কোবালামিন)
ভিটামিন বি৩ শক্তি উৎপাদনে, খাদ্য হজমে, কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রনে ভূমিকা রাখে। শরীরে খুব কম পরিমাণে উপস্থিত থাকে। নারী-পুরুষভেদে ১৪-১৮ মিলি গ্রাম দৈনিক গ্ৰহণ করা উচিত। বি৬ হিমোগ্লোবিন তৈরিতে, স্নায়ুতন্ত্রের কার্যক্রমে, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে ও বিপাকে সাহায্য করে থাকে।শরীরে ১০০-১৫০ মিলিগ্ৰাম উপস্থিত থাকে। দৈনিক অবস্থা ভেদে ১.৩-২.০ মিলিগ্ৰাম গ্রহণ করা উচিত। বি১২ ডিএনএ ,লোহিত রক্তকনিকা তৈরিতে,স্নায়ুকোষ তৈরিতে, আয়রন তৈরির চক্রে সাহায্য করে থাকে। মানবদেহে ২-৫ মিলিগ্ৰাম থাকে। দৈনিক ২.৪-২.৮ মাইক্রোগ্ৰাম গ্ৰহণ করা উচিত।
- প্রতি ১০০ গ্রাম কবুতরের মাংসে থাকে বি৩ ৬.০–৭.৫ মি. গ্ৰা, বি৬ ০.৪–০.৬ মি. গ্ৰা, বি ১২ ১.৫–২.০ মি. গ্ৰা।
- প্রতি ১০০ গ্রাম গরুর মাংসে থাকে বি৩ ৫.৫–৭.০ মি গ্ৰা, বি৬ ০.৪–০.৫ মি গ্ৰা, বি১২ ২.০–২.৬ মি গ্ৰা
- প্রতি ১০০ গ্রাম সোনালী মুরগির মাংসে থাকে বি৩ ১০–১২ মি গ্ৰা, বি৬ ০.৫–০.৬ মি গ্ৰা, বি১২ ০.৫–০.৭ মি গ্ৰা।
- প্রতি ১০০ গ্রাম ছাগলের মাংসে থাকে বি৩ ৬.৫–৭.৫ মি গ্ৰা, বি৬ ০.৩–০.৪ মি গ্ৰা, বি১২ ১.৭–২.২ মি গ্ৰা
- প্রতি ১০০ গ্রাম রাজহাঁসের মাংসে থাকে বি৩ ৫.০–৬.৫ মি গ্ৰা, বি৬ ০.৩–০.৪ মি গ্ৰা, বি১২ ০.৮–১.২ মি গ্ৰা।
- প্রতি ১০০ গ্রাম মহিষের কাঁচা মাংসে থাকে বি৩ ৪.৫–৬.৫ মিলিগ্রাম, বি৬ ০.৩–০.৪ মিলিগ্রাম, বি১২ ১.৮–২.৫ মাইক্রোগ্রাম।
- প্রতি ১০০ গ্রাম চামড়াসহ পাতিহাঁসের মাংসে থাকে ভিটামিন বি৩ ৫.০–৫.৫ মি.গ্রা, ভিটামিন বি৬ ০.২৫–০.৩০ মি.গ্রা, ভিটামিন বি১২, ০.৪–০.৬ মাইক্রোগ্রাম।
- প্রতি ১০০ গ্ৰাম ভেড়ার মাংসে থাকে ভিটামিন বি৩ ৬.৫–৭.৫ মি.গ্রা, ভিটামিন বি৬ ০.২–০.৩ মি.গ্রা, ভিটামিন বি১২ ২.০–২.৩ মাইক্রোগ্রাম।
- প্রতি ১০০ গ্রাম গাড়লের মাংসে থাকে ভিটামিন বি৩ ৬.৫–৭.২ মি.গ্রা, ভিটামিন বি৬ ০.২–০.৩ মি.গ্রা, ভিটামিন বি১২ ২.০–২.৪ মাইক্রোগ্রাম।
- প্রতি ১০০ গ্রাম ব্রয়লার মুরগির মাংসে থাকে ভিটামিন বি৩ ১০–১২ মি.গ্রা, ভিটামিন বি৬ ০.৪–০.৬ মি.গ্রা, ভিটামিন বি১২ ০.৩–০.৫ মাইক্রোগ্রাম।
- প্রতি ১০০ গ্রাম কোয়েলের মাংসে থাকে ভিটামিন বি৩ ৫–৬ মি.গ্রা, ভিটামিন বি৬ ০.৪–০.৫ মি.গ্রা, ভিটামিন বি১২ ১.৫–১.৯ মাইক্রোগ্রাম।
কোলেস্টেরল
আমরা জানি কোলেস্টেরল দেহের ক্ষতি করে হৃদরোগ, স্ট্রোক, উচ্চ রক্তচাপ, শিরা - ধমনীতে বাধা তৈরি করে থাকে। কিন্তু কোলেস্টেরল কোষ তৈরিতে, হরমোন (টেস্টোস্টেরন, ইস্ট্রোজেন, কর্টিসল) তৈরিতে, ভিটামিন ডি তৈরিতে, পিত্তরস তৈরিতে অবদান রাখে। মানুষের শরীরে ১০০-১৫০ গ্রাম কোলেস্টেরল পাওয়া যায়। দৈনিক ৮০০-১২০০ মিলিগ্ৰাম কোলেস্টেরল প্রয়োজন পড়ে যার পুরোটাই শরীর নিজেই তৈরি করে। বাইরের খাবারের মাধ্যমে সরবরাহ করার প্রয়োজন পড়ে না। তাই যত কম খাওয়া যায় ততই ভালো।
- প্রতি ১০০ গ্ৰাম কবুতরের মাংসে থাকে ৭০–৮০ মিলিগ্ৰাম
- প্রতি ১০০ গ্ৰাম গরুর মাংসে থাকে ৭০–৯০ মিলিগ্ৰাম
- প্রতি ১০০ গ্ৰাম সোনালী মুরগির মাংসে থাকে ৬০–৭৫ মিলিগ্ৰাম
- প্রতি ১০০ গ্ৰাম ছাগলের মাংসে থাকে ৬০–৭৫ মিলিগ্ৰাম
- প্রতি ১০০ গ্ৰাম রাজহাঁসের মাংসে থাকে ৮০-৯৫ মিলিগ্ৰাম
- প্রতি ১০০ গ্ৰাম মহিষের কাঁচা মাংসে ৬০–৭৫ মিলিগ্রাম
- প্রতি ১০০ গ্রাম চামড়াসহ পাতিহাঁসের মাংসে থাকে ৭০–৮৫
- প্রতি ১০০ গ্ৰাম ভেড়ার মাংসে থাকে ৭০–৯০ মি.গ্রা
- প্রতি ১০০ গ্রাম গাড়লের মাংসে থাকে ৭০–৯০ মি.গ্রা
- প্রতি ১০০ গ্রাম ব্রয়লার মুরগির মাংসে থাকে ৬০–৭৫ মি.গ্রা
- প্রতি ১০০ গ্রাম কোয়েলের মাংসে থাকে ৬০–৭৫ মি.গ্রা।
ক্যালরি
আমাদের শরীরের স্বাভাবিক কার্যক্রম যেমন :- হাঁটা,কথা বলা,খাবার চিবানো,নিঃশ্বাস নিতে শক্তির প্রয়োজন। শরীরকে ঠান্ডা বা গরম রাখতে,হৃৎপিণ্ড, কিডনি, ফুসফুস এর কার্যক্রম চালাতে,শরীরের বৃদ্ধিতে ক্যালরি প্রয়োজন। মস্তিষ্ক প্রতিদিন ৩০০-৪০০ ক্যালরি ব্যবহার করে। বেশি ক্যালরি খেলে মোটা ও কম ক্যালরি খেলে অসুস্থ হওয়ার পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে। বেশি খেতে চাইলে কম ক্যালরিযুক্ত খাবার খাওয়া উচিত। বয়স ও পরিস্থিতি ভেদে ১০০০-৩০০০ ক্যালরি গ্ৰহণ করা উচিত।
- প্রতি ১০০ গ্রাম কবুতরের মাংসে থাকে ১২০–১৩০ কিলোক্যালোরি
- প্রতি ১০০ গ্রাম গরুর মাংসে থাকে ২৫০–২৭০ কিলোক্যালোরি
- প্রতি ১০০ গ্রাম সোনালী মুরগির মাংসে থাকে ১৬০–১৮০ কিলোক্যালোরি
- প্রতি ১০০ গ্রাম ছাগলের মাংসে থাকে ১৪৩–১৬০ কিলোক্যালোরি
- প্রতি ১০০ গ্রাম রাজহাঁসের মাংসে থাকে ৩২০–৩৫০ কিলোক্যালোরি
- প্রতি ১০০ গ্রাম মহিষের মাংসে থাকে ২২০–২৫০ কিলোক্যালোরি
- প্রতি ১০০ গ্রাম চামড়াসহ পাতিহাঁসের মাংসে থাকে ৩৩০–৩৭০ কিলোক্যালোরি
- প্রতি ১০০ গ্ৰাম ভেড়ার মাংসে থাকে ২৮০–৩২০ কিলোক্যালোরি
- প্রতি ১০০ গ্রাম গাড়লের মাংসে থাকে ২৮০–৩০০ কিলোক্যালোরি
- প্রতি ১০০ গ্রাম ব্রয়লার মুরগির মাংসে থাকে ১৬৫–১৯০ কিলোক্যালোরি
- প্রতি ১০০ গ্রাম কোয়েলের মাংসে থাকে ১৬০–১৮০ কিলোক্যালোরি।
স্বাদ
- কবুতরের মাংসের স্বাদ আলাদা ঘনত্বের
- গরুর মাংসের স্বাদ সুস্বাদু
- সোনালী মুরগির মাংসের স্বাদ পরিচিত
- ছাগলের মাংসের স্বাদ আলাদা
- রাজহাঁসের মাংসের স্বাদ সুস্বাদু
- মহিষের মাংসের স্বাদ তেলতেলে
- পাতিহাঁসের মাংস একটু গন্ধ, তেলতেলে
- ভেড়ার মাংসের স্বাদ মাটির মতো
- গাড়লের মাংস গাঢ়, মাটির গন্ধ
- ব্রয়লার মুরগির মাংস গন্ধযুক্ত
- কোয়েলের মাংস গন্ধযুক্ত তবে অনেকের কাছে সুস্বাদু।
মাংসের কাঠিন্যতা
- কবুতরের মাংস তুলনামূলকভাবে শক্ত
- গরুর মাংস শক্ত
- সোনালী মুরগির মাংস নরম
- ছাগলের মাংসের প্রকৃতি শক্ত
- রাজহাঁসের মাংস শক্ত
- মহিষের মাংস মাঝারি থেকে শক্ত
- পাতিহাঁসের মাংস শক্ত
- ভেড়ার মাংস মধ্যম
- গাড়লের মাংস আশযুক্ত, শক্ত
- ব্রয়লার মুরগির মাংস নরম, তুলতুলে
- কোয়েলের মাংস নরম।
হজম প্রক্রিয়া
- কবুতরের মাংস হজম হয় দ্রুত
- গরুর মাংস হজম হয় ধীরে
- ছাগলের মাংস হজম হয় ধীরে
- রাজহাঁসের মাংসের হজম কষ্টকর
- মহিষের মাংসের হজম ধীর
- পাতিহাঁসের মাংসের হজম ধীর
- ভেড়ার মাংসের হজম ধীর
- গাড়লের মাংসের হজম ধীর
- ব্রয়লার মুরগির মাংসের হজম দ্রুত।
- কোয়েলের মাংস সহজপাচ্য।
রান্নার সময়
- কবুতরের মাংস রান্না করতে সময় লাগে বেশি
- গরুর মাংস রান্না করতে সময় লাগে বেশি বিশেষত কষা মাংস
- সোনালী মুরগির মাংস রান্না করতে সময় লাগে কম
- ছাগলের মাংস রান্না করতে সময় লাগে বেশি
- রাজহাঁসের মাংস রান্না করতে সময় লাগে বেশি
- মহিষের মাংস রান্না করতে সময় লাগে বেশি
- পাতিহাঁসের মাংস রান্না করতে বেশি সময় লাগে
- ভেড়ার মাংস রান্না করতে সময় লাগে কম
- গাড়লের মাংস রান্না করতে সময় লাগে বেশি
- ব্রয়লার মুরগির মাংস রান্না করতে কম সময় লাগে।
- কোয়েল পাখির মাংস রান্না করতে সময় লাগে কম।
প্রাপ্যতা
- কবুতরের মাংসের প্রাপ্যতা তুলনামূলক ভাবে কঠিন ।
- গরুর মাংসের প্রাপ্যতা সহজলভ্য।
- সোনালী মুরগির মাংসের প্রাপ্যতা সহজলভ্য।
- ছাগলের মাংসের প্রাপ্যতা সহজলভ্য
- রাজহাঁসের মাংসের প্রাপ্যতা কঠিন
- মহিষের মাংসের প্রাপ্যতা কম।
- পাতিহাঁসের প্রাপ্যতা সহজলভ্য নয়।
- ভেড়ার মাংসের প্রাপ্যতা সহজলভ্য নয়।
- গাড়লের মাংসের প্রাপ্যতা সহজলভ্য নয়।
- ব্রয়লার মুরগির মাংসের প্রাপ্যতা সহজলভ্য।
- কোয়েল পাখির প্রাপ্যতা সহজলভ্য।
দাম
- কবুতরের দাম জোড়া প্রতি ৩০০-৪০০ টাকা।
- গরুর মাংসের দাম কেজি প্রতি ৭৫০-৮৫০ টাকা।
- সোনালী মুরগির দাম কেজি প্রতি ২৮০-৩৫০ টাকা
- ছাগলের মাংসের দাম কেজি প্রতি ১১০০-১৩০০ টাকা।
- রাজহাঁসের দাম প্রতি পিস ১২০০-১৯০০ টাকা।
- মহিষের মাংসের দাম কেজি প্রতি ৫৫০-৭৫০ টাকা
- জীবিত পাতিহাঁসের দাম কেজি প্রতি ৩৫০-৪৫০ টাকা
- ভেড়ার মাংসের দাম কেজি প্রতি ৮৫০-১১০০ টাকা
- গাড়লের মাংসের দাম কেজি প্রতি ৮৫০-১১০০ টাকা
- বয়লার মুরগির মাংসের দাম কেজি প্রতি ১৭০-২২০ টাকা
- কোয়েল পাখির দাম প্রতি পিস ৩০-৬০ টাকা।
উপসংহার
প্রোটিন,চর্বি,আয়রন,জিংক,সেলেনিয়াম,ভিটামিন বি,কোলেস্টেরল,ক্যালরির পরিমাণ।স্বাদ,হজম প্রক্রিয়া, রান্নার সময়,কাঠিন্যতা,দাম সবকিছু বিবেচনা করলে দেখা যায় কবুতর অন্যান্য প্রানীর মাংসের চেয়ে অনেক ক্ষেত্রে এগিয়ে যদিও কিছু ক্ষেত্রে পিছিয়ে। সার্বিক দিক বিবেচনা করলে দেখা যায় কবুতরের মাংসকে আমিষ সহ অনেক কিছুর অভাব পূরণে অন্যান্য প্রাণীর মাংসের সাথে প্রতিযোগিতায় দাঁড়ানোর মতো যোগ্যতা রয়েছে।