এন্টিবায়োটিক কি, শ্রেণীবিভাগ, কিভাবে কাজ করে ও অন্যান্য খুঁটিনাটি তথ্যসমৃদ্ধ গাইড।

 

এন্টিবায়োটিক কি

এন্টিবায়োটিকের আবিষ্কার চিকিৎসাবিজ্ঞানে এক আমূল পরিবর্তন নিয়ে এসেছে। অনেক প্রাণঘাতী রোগ থেকে রক্ষা পাওয়া সহজ হয়ে গিয়েছে। এটি রোগ প্রতিরোধের ক্ষেত্রে বিপ্লব নিয়ে এসেছে। বিভিন্ন মরণঘাতী রোগের চিকিৎসায় এটি প্রধান ভুমিকা পালন করে থাকে। কিন্তু রেজিস্টার্ড ডাক্তারের পরামর্শ ব্যতীত এন্টিবায়োটিক নেওয়া বিপজ্জনক হতে পারে। তাই এর সঠিক এবং নিরাপদ ব্যবহার নিশ্চিত করা জরুরি হয়ে পড়েছে।

এন্টিবায়োটিক(Antibiotics)

বায়োটিক মানে যা জীবন্ত তা ই। প্রানিবিজ্ঞানের ভাষায় যে কোনো জীবিত জীব‌ই বায়োটিকস এর অন্তর্ভুক্ত। বায়োটিকস শব্দটি এসেছে গ্ৰিক শব্দ বায়োস(bios) থেকে যার অর্থ জীবন। গাছ-পালা, পশু-পাখি, ব্যাকটেরিয়া সহ সকল জীবন্ত জীব‌ই বায়োটিকের অন্তর্ভুক্ত। এন্টি মানে বিপরীত বা বিপক্ষে। কিন্তু যখন এই দুইটি শব্দকে একত্রিত করা হয় তখন সেইটা একটা বিশেষ অর্থ বহন করে। এন্টিবায়োটিক বলতে সেই সকল ওষুধ কে বোঝায় যে সকল ওষুধ শুধু মাত্র ব্যাকটেরিয়া দ্বারা ঘটিত সকল রোগের বিপক্ষে কাজ করে। যেমন :- অ্যামক্সিলিন, ক্লিনডামাইসিন, সিপ্রোফ্লক্সাসিন।

প্রকৃতি

এন্টিবায়োটিক বিভিন্ন রূপে পাওয়া যায়। যথা :-

  • ট্যাবলেট - এজিথ্রোমাইসিন, সিপ্রোফ্লক্সাসিন
  • ক্যাপসুল - এমক্সিসিলিন, ডক্সিসাইক্লিন
  • সিরাপ / সাসপেনশন- সেফিক্সিম
  • ইনজেকশন -  সেফট্রাইক্সোন, মেরোপেনাম
  • সাপোজিটরি - মেট্রোনিডাজল, ক্লোরামফেনিকল
  • ড্রপ - সিপ্রোফ্লক্সাসিন 
  • ক্রিম/অয়েন্টমেন্ট - ফুসিডিক এসিড
  • জেল/লোশন -ক্লিনডামাইসিন জেল
  • পাউডার - নিওমাইসিন 
  • স্প্রে - নিওমাইসিন 

শরীরে প্রবেশের উপায়

সাধারণত এন্টিবায়োটিককে বিভিন্ন উপায়ে শরীরে প্রবেশ করানো হয়। যথা :-

  • মুখ - এমক্সিসিলিন, এজিথ্রোমাইসিন
  • শ্বাসতন্ত্রের নেবুলাইজার সলিউশন - টোবরামাইসিন
  • চোখে - সিপ্রোফ্লক্সাসিন ড্রপ
  • কানে - জেন্টামাইসিন ড্রপ
  • পায়ুপথে - মেট্রোনিডাজল, ক্লোরামফেনিকল
  • যৌনাঙ্গে - ক্লিনডামাইসিন, নিওমাইসিন, মেট্রোনিডাজল
  • চামড়ায় - ফুসিডিক এসিড, ক্লিনডামাইসিন জেল, নিওমাইসিন পাউডার
  • শিরাতে আইভি - সেফট্রাইক্সোন, মেরোপেনাম
  • মাংসে আইএম - পেনিসিলিন জি, জেন্টামাইসিন

মাত্রা

এন্টিবায়োটিক বিভিন্ন মাত্রায় পাওয়া যায়। যথা :-

ট্যাবলেট/ক্যাপসুল

  • ১০০ মিলিগ্ৰাম - ডক্সিসাইক্লিন
  • ২০০ মি.গ্রাম - মেট্রোনিডাজল
  • ২৫০ মি. গ্ৰাম - সিপ্রোফ্লক্সাসিন
  • ৩০০ মি. গ্ৰাম - ক্লিনডামাইসিন
  • ৪০০ মি. গ্ৰাম - সেফিক্সিম
  • ৫০০ মি. গ্ৰাম - এজিথ্রোমাইসিন
  • ৭৫০ মি. গ্রাম - সিপ্রোফ্লক্সাসিন
  • ৮৭৫ মি. গ্ৰাম - এমোক্সিসিলিন

সিরাপ/সাসপেনশন

  • ১০০ মি. গ্ৰাম/৫ মি.লি. - সেফিক্সিম
  • ১২৫ মি. গ্ৰাম/৫ মি.লি. - এমোক্সিসিলিন
  • ২০০ মি. গ্ৰাম/৫ মি.লি. - এজিথ্রোমাইসিন
  • ২৫০ মি. গ্ৰাম/৫ মি.লি. - মেট্রোনিডাজল

ইনজেকশন

  • ২৫০ মি. গ্ৰাম - এমপিসিলিন
  • ৫০০ মি. গ্ৰাম - ভ্যানকোমাইসিন
  • ১ গ্ৰাম - মেরোপেনাম
  • ২ গ্ৰাম - সেফট্রাইক্সোন
  • ৪০ মি. গ্রাম/মি.লি. - জেন্টামাইসিন
  • ৮০ মি. গ্ৰাম/২ মি.লি. - জেন্টামাইসিন

সাপোজিটরি

  • ১০০ মি. গ্ৰাম - ক্লিনডামাইসিন
  • ২৫০ মি. গ্ৰাম - ক্লোরামফেনিকল
  • ৩০০ মি. গ্ৰাম - ক্লিনডামাইসিন
  • ৫০০ মি. গ্ৰাম - মেট্রোনিডাজল

চামড়ায় ব্যবহার্য

  • ১% - ক্লিনডামাইসিন জেল/ লোশন
  • ২% - মুপিরোসিন ওয়েন্টমেন্ট, ফুসিডিক এসিড ক্রিম

চোখ বা কানের ড্রপ

  • ০.৩% - সিপ্রোফ্লক্সাসিন

শ্রেণীবিভাগ

এন্টিবায়োটিক বিভিন্ন বিষয়ের উপর ভিত্তি করে বিভিন্ন ভাগে ভাগ করা যায়। যেমন :-

কার্যপদ্ধতির ভিত্তি

কার্যপদ্ধতির ভিত্তিতে এন্টিবায়োটিকসকে প্রধানত ২ ভাগে ভাগ করা হয়। যথা :-

ব্যাকটেরিয়াকে মেরে ফেলা (Bactericidal)

এই সব এন্টিবায়োটিক ব্যাকটেরিয়াকে পুরোপুরি ধ্বংস করে ফেলে।

উদাহরণ : - পেনিসিলিন(Penicillin), সেফালোস্পোরিন(Cephalosporin), কুইনোলোন(Quinolone)

ব্যাকটেরিয়ার বৃদ্ধি রোধ(Bacteriostatic)

এই সব এন্টিবায়োটিক ব্যাকটেরিয়ার বৃদ্ধি রোধ করে থাকে।

উদাহরণ :- টেট্রাসাইক্লিন(Tetracycline), ম্যাক্রোলাইড(Macrolide)

কাজের ক্ষেত্র

কাজের ক্ষেত্রের বিস্তৃতির উপর ভিত্তি করে ২ ভাগে ভাগ করা যায়। যথা :-

নির্দিষ্ট (Narrow-spectrum)

এই সব এন্টিবায়োটিক একটা নির্দিষ্ট ধরনের ব্যাকটেরিয়ার উপর কাজ করে থাকে। এটা হতে পারে শুধু মাত্র গ্ৰাম পজেটিভ বা শুধুমাত্র গ্রাম নেগেটিভ ব্যাকটেরিয়া। অথবা সবাত বা অবাত ব্যাকটেরিয়া।

উদাহরণ :- ক্লিনডামাইসিন।

বিভিন্ন (Broad-spectrum)

এই ধরনের এন্টিবায়োটিক এক‌ইসাথে বিভিন্ন ধরনের ব্যাকটেরিয়ার উপর কাজ করে থাকে। গ্ৰাম পজেটিভ বা নেগেটিভ উভয়ের উপর‌ই কাজ করতে পারে এক‌ই সাথে।

উদাহরণ :-অ্যামোক্সিলিন।

এন্টিবায়োটিক কিভাবে কাজ করে

গঠন

গঠনের উপর ভিত্তি করে

বিটা ল্যাকটাম রিংযুক্ত

বিটা ল্যাকটাম রিংযুক্ত এন্টিবায়োটিক গুলোকে আবার ৩ ভাগে ভাগ করা যায়। যথা :-

১. বিটা ল্যাকটাম রিংযুক্ত পেনিসিলিন

এই ধরনের এন্টিবায়োটিকের গঠনের মধ্যে বিটা ল্যাকটাম রিং পাওয়া যায়। এরা সাধারণত ব্যাকটেরিয়ার কোষ প্রাচীর ধ্বংস করে থাকে। এই ধরনের এন্টিবায়োটিক আবার ২ ধরনের।যথা :-

পেনিসিলিন(Penicillin)

পেনিসিলিনকে আবার ৪ ভাগে ভাগ করা যায়। যথা :-

  • প্রাকৃতিক পেনিসিলিন :- পেনিসিলিন জি(Penicillin G)
  • অ্যামিনোপেনিসিলিন :- অ্যামোক্সিলিন(Amoxicillin), এমপিসিলিন(Ampicillin)
  • পেনিসিলেনেজ এনজাইম প্রতিরোধী :-ক্লোক্সাসিলিন(Cloxacillin)
  • বিভিন্ন রকম ব্যাকটেরিয়া প্রতিরোধী (Broad Spectrum) :- পিপারেসিলিন(Piperacillin)

২. বিটা ল্যাকটাম রিংযুক্ত কার্বাপেনাম

এই সব এন্টিবায়োটিকে পেনিসিলিনের মতো বিটা ল্যাকটাম থাকলেও এরা অত্যন্ত শক্তিশালী। এরা ব্যাকটেরিয়ার কোষ প্রাচীর ভেঙে ফেলে। রেজিস্ট্যান্ড ব্যাকটেরিয়ার ক্ষেত্রে বেশি কার্যকরী।

উদাহরণ :- ইমিপেনাম(Imipenem), মেরোপেনাম(Meropenem)

৩. একক বিটা ল্যাকটাম রিংযুক্ত

এরা সাধারণত ব্যাকটেরিয়ার কোষ প্রাচীর ভেঙে ফেলে। এরা গ্রাম-নেগেটিভ ব্যাটেরিয়ার ক্ষেত্রে বেশি কার্যকর। অন্যান্য বিটা ল্যাকটাম এন্টিবায়োটিকে এলার্জিক প্রতিক্রিয়া তৈরি করলে এই এন্টিবায়োটিক দেওয়া হয়।

উদাহরণ :- এজট্রিওনাম(Aztreonam)

সেফালোস্পোরিন(Cephalosporins)

এই ধরনের এন্টিবায়োটিককে ৫ প্রজন্মে ভাগ করা হয়। যথা :-

  • প্রথম প্রজন্ম :- সেফালেক্সিন(Cephalexin)
  • দ্বিতীয় প্রজন্ম :- সেফুরোক্সিম(Cefuroxime)
  • তৃতীয় প্রজন্ম :- সেফিক্সিম(Cefixime), সেফট্রাইক্সোন(Ceftriaxone)
  • চতুর্থ প্রজন্ম :- সেফিপিম(Cefepime)
  • পঞ্চম প্রজন্ম :- সেফটারোলিন (Ceftaroline)

ম্যাক্রোল্যাকটোন রিংযুক্ত

এরা সাধারণত ব্যাকটেরিয়ার প্রোটিন তৈরিতে বাধা প্রদান করে থাকে। বিশেষত রাইবোসোমের ৫০S ইউনিটের উপর কাজ করে থাকে।

উদাহরণ :- এরিথ্রোমাইসিন(Erythromycin), এজিথ্রোমাইসিন(Azithromycin), ক্ল্যারিথ্রোমাইসিন(Clarithromycin)

চারটি হাইড্রোকার্বন রিংযুক্ত

এই সব এন্টিবায়োটিক ব্যাকটেরিয়ার প্রোটিন তৈরিতে বাধা প্রদান করে তবে এরা সাধারণত রাইবোসোমের ৩০S ইউনিটের উপর কাজ করে থাকে।

উদাহরণ :- ডক্সিসাইক্লিন(Doxycycline), টেট্রাসাইক্লিন(Tetracycline)

অ্যামিনো সুগার যুক্ত

এই সব এন্টিবায়োটিক‌ও ব্যাকটেরিয়ার প্রোটিন তৈরিতে বাধা প্রদান করে এবং এরাও সাধারণত রাইবোসোমের ৩০S ইউনিটের উপর কাজ করে থাকে।

উদাহরণ :- জেন্টামাইসিন(Gentamicin), এমিক্যাসিন(Amikacin), স্ট্রেপটোমাইসিন(Streptomycin)

কুইনোলোন রিংযুক্ত

এই সব এন্টিবায়োটিক সাধারণত ব্যাকটেরিয়ার ডিএন‌এ এর উপর কাজ করে থাকে।

উদাহরণ :- সিপ্রোফ্লক্সাসিন(Ciprofloxacin), লিভোফ্লক্সাসিন(Levofloxacin), মক্সিফ্লক্সাসিন(Moxifloxacin)

প্যারাঅ্যামিনোবেনজোইক অ্যাসিড (PABA) যুক্ত

এই সব এন্টিবায়োটিক ব্যাকটেরিয়ার ফোলিক অ্যাসিড তৈরি তে বাধা প্রদান করে থাকে।

উদাহরণ :- সালফামিথোক্সোল(Sulfamethoxazole), কো-ট্রাইমোক্সাজোল(Co-trimoxazole)

গ্লাইকোসাইলেটেড পেপটাইড যুক্ত

এই সব এন্টিবায়োটিক ব্যাকটেরিয়ার কোষ প্রাচীর তৈরিতে বাধা প্রদান করে থাকে। এরা সাধারণত গ্রাম পজিটিভ ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে ভালো কাজ করে থাকে।

উদাহরণ :- ভ্যানকোমাইসিন(Vancomycin)

অক্সাজোলিডিনোন রিং যুক্ত

এরা সাধারণত ব্যাকটেরিয়ার প্রোটিন তৈরিতে বাধা প্রদান করে থাকে। বিশেষত রাইবোসোমের ৫০S ইউনিটের উপর কাজ করে থাকে। এরা সাধারণত রেজিস্ট্যান্ট ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে বেশি কার্যকর।

উদাহরণ :- লিনেজোলাইড(Linezolid), টেডিজোলাইড(Tedizolid)

অ্যামিনো-অ্যাসিড যুক্ত

এরাও সাধারণত ব্যাকটেরিয়ার প্রোটিন তৈরিতে বাধা প্রদান করে থাকে। বিশেষত রাইবোসোমের ৫০S ইউনিটের উপর কাজ করে থাকে।

উদাহরণ :- ক্লিনডামাইসিন(Clindamycin), লিঙকোমাইসিন(Lincomycin)

পলিপেপ্টাইড যুক্ত

এই সব এন্টিবায়োটিক ব্যাকটেরিয়ার কোষ ঝিল্লী ভেঙে ফেলে। সাধারণত গ্রাম-নেগেটিভ ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে বেশি কার্যকরী।

উদাহরণ :- পলিমিক্সিন বি(Polymyxin B), পলিমিক্সিন ই(Polymyxin E)

অ্যারোমেটিক রিং যুক্ত

এরা ব্যাকটেরিয়ার আর‌এন‌এ জিনের উপর কাজ করে থাকে।

উদাহরণ :- রিফামপিসিন(Rifampicin),রিফাবিউটিন(Rifabutin)

নিউক্লিওটাইড যুক্ত

এরা সাধারণত ব্যাকটেরিয়ার ডিএন‌এ ও আরএন‌এ এর উপর কাজ করে থাকে। তবে অনেক সময় ভাইরাসের বিরুদ্ধেও কাজ করতে দেখা যায়।

উদাহরণ :- ফিডাক্সোমিসিন(Fidaxomicin)

ব্যাকটেরিয়ার ধরন

কোন ধরনের ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে বেশি কার্যকরী। তার উপর ভিত্তি করে ৩ ভাগে ভাগ করা হয়। যথা :-

গ্ৰাম পজেটিভ

এই সব এন্টিবায়োটিক শুধুমাত্র গ্ৰাম পজেটিভ ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে কাজ করে থাকে।

উদাহরণ :- ভ্যানকোমাইসিন, লিনেজোলিড

গ্রাম নেগেটিভ

এই সব এন্টিবায়োটিক শুধুমাত্র গ্ৰাম নেগেটিভ ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে কাজ করে থাকে।

উদাহরণ :- এজট্রিওনাম, পলিমিক্সিন বি

পজেটিভ-নেগেটিভ উভয়

এই সব এন্টিবায়োটিক শুধুমাত্র গ্ৰাম পজেটিভ ও নেগেটিভ উভয় ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে কাজ করে থাকে।

উদাহরণ :- এমক্সিলিন-ক্লাভুলেনিক এসিড, সিপ্রোফ্লক্সাসিন, ডক্সিসাইক্লিন

উৎপত্তি

উৎপত্তি অনুসারে এন্টিবায়োটিককে ৩ ভাগে ভাগ করা যায়। যথা :-

প্রাকৃতিক

পেনিসিলিন - পেনিসিলিয়াম ছত্রাক থেকে

স্ট্রেপটোমাইসিন - স্ট্রেপটোমাইসিস ব্যাকটেরিয়া থেকে

কৃত্রিম

উদাহরণ :- সালফোনামাইড, ফ্লুরোকুইনোলোন

আধা কৃত্রিম

উদাহরণ :- এমক্সিসিলিন,সেফালেক্সিন

এন্টিবায়োটিকের প্রভাব

এন্টিবায়োটিক বন্ধ করার পর‌ও প্রভাবের উপর ভিত্তি করে ২ ভাগে ভাগ করা যায়‌ যথা :-

প্রভাব থাকে

এই সব এন্টিবায়োটিক বন্ধ করার পর‌ প্রভাব থাকে।

উদাহরণ :- এমাইনোগ্লাইকোসাইড, ফ্লুরোকুইনোলোন

প্রভাব থাকে না

এই সব এন্টিবায়োটিক বন্ধ করার পর‌ প্রভাব থাকে না বা থাকলেও খুবই কম থাকে।

উদাহরণ :- বিটা ল্যাকটাম রিংযুক্ত সকল এন্টিবায়োটিক তবে বিটা ল্যাকটাম রিংযুক্ত কার্বাপেনাম শ্রেণী ছাড়া।

গর্ভাবস্থায় নিরাপত্তা

গর্ভাবস্থায় নিরাপত্তার ভিত্তিতে এন্টিবায়োটিককে ২ ভাগে ভাগ করা যায়। যথা :-

নিরাপদ

এই সব এন্টিবায়োটিককে ক্যাটাগরি বি ওষুধ বলা হয়।

উদাহরণ :- এমক্সিসিলিন, এজিথ্রোমাইসিন

অনিরাপদ

এই সব এন্টিবায়োটিককে ক্যাটাগরি সি ও ডি বলা হয়। বিপদে না পড়লে ব্যবহার নিষিদ্ধ।

উদাহরণ :- সিপ্রোফ্লক্সাসিন, ডক্সিসাইক্লিন

ডব্লিউ এইচ ও(WHO)

ডব্লিউ এইচ ও(WHO) এন্টিবায়োটিককে ৩ (AWaRe) শ্রেনীতে রেখেছে। যথা :-

সহজপ্রাপ্য(Access)

কিছু এন্টিবায়োটিক সহজে সব জায়গাতে পাওয়া যায় তাদের এই শ্রেণীতে রাখা হয়েছে।

উদাহরণ :- এমক্সিসিলিন, ডক্সিসাইক্লিন

রেজিস্ট্যান্সের ঝুঁকি(Watch)

এই সব এন্টিবায়োটিক খুব শীঘ্র‌ই রেজিস্ট্যান্ট হয়ে যেতে পারে। তাই এই সব এন্টিবায়োটিককে পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে।

উদাহরণ :- সেফট্রাইক্সোন, ফ্লুরোকু‌ইনোলোন

শেষ বিকল্প(Reserve)

সব এন্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্ড হয়ে গেলে এই সকল এন্টিবায়োটিককে হাতে রাখা হয়েছে বিকল্প হিসেবে।

উদাহরণ :- কলিসটিন, লিনেজলিড

কিভাবে কাজ করে

এন্টিবায়োটিক সাধারণত ৯ টি পদ্ধতিতে কাজ করে থাকে। যথা :-

কোষ প্রাচীর ধ্বংস

ব্যাকটেরিয়ার কোষ প্রাচীর সাধারণত পেপটাইডোগ্লাইকেন নামক একটা পদার্থ দিয়ে গঠিত। যা মানব শরীরে পাওয়া যায় না।ফলে ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস হয় শরীরের কোনো ক্ষতি হয় না। পেনিসিলিন, সেফালোস্পোরিন শ্রেণীর এন্টিবায়োটিক ব্যাকটেরিয়ার কোষ প্রাচীরে আক্রমণ করে কোষ প্রাচীর ভেঙে ফেলে এবং নতুন ব্যাকটেরিয়া গঠনের সময় কোষ প্রাচীর তৈরিতে বাধা প্রদান করে থাকে। কোষ প্রাচীর না থাকলে ব্যাকটেরিয়ার অস্তিত্ব ও টিকে থাকে না। এই ধরনের এন্টিবায়োটিক সাধারণত গ্রাম পজেটিভ ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে বেশি কার্যকর।

প্রোটিন তৈরিতে বাধা

ব্যাকটেরিয়ার রাইবোসোম ৭০S অপরদিকে মানুষের শরীরের রাইবোসোম ৮০S ফলে এন্টিবায়োটিক রাইবোসোমে আক্রমণ করলে শরীরের কোনো ক্ষতি হয় না। ব্যকটেরিয়ার আবশ্যকীয় প্রোটিন তৈরি বাধা প্রাপ্ত হ‌ওয়ায় ব্যাকটেরিয়া বাঁচতে পারে না। উদাহরণ :- টেট্রাসাইক্লিন,এমিনোগ্লাইকোসাইড, ম্যাক্রোলিড

জীন তৈরিতে বাধা

কিছু এন্টিবায়োটিক ব্যাকটেরিয়ার ডিএন‌এ ও আর‌এন‌এ তৈরি তে বাধা প্রদান করে ফলে ব্যাকটেরিয়া বৃদ্ধি পেতে পারে না। যেমন :- সিপ্রোফ্লক্সাসিন, রিফামপিসিন

কোষ ঝিল্লী

কিছু  ব্যাকটেরিয়ার কোষের বাইরে লিপিড পলিস্যাকারাইডের স্তর থাকে। পলিমিক্সিন এন্টিবায়োটিক ব্যাকটেরিয়ার এই স্তরে আক্রমণ করে থাকে। ফলে ব্যাকটেরিয়া ভেঙে যায় ভিতরের উপাদান বের হয়ে যায়।ব্যাকটেরিয়া মারা যায়। এই ধরন ব্যাকটেরিয়া সাধারণত গ্রাম নেগেটিভ ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে বেশি কার্যকর।

মেটাবলিজমে বাধা

ব্যাকটেরিয়া নিজের জন্য ফোলিক এসিড তৈরি করে। যা জীনের গঠনের জন্য অত্যাবশকীয়। সালফোনামাইড, ট্রাইমেথোপ্রিম ব্যাকটেরিয়ার ফোলিক এসিড উৎপাদনে বাধা প্রদান করে থাকে

প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি

এন্টিবায়োটিক শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে ব্যাকটেরিয়াকে ধ্বংস করতে শরীরকে সাহায্য করে থাকে। এন্টিবায়োটিক শরীরে ব্যাকটেরিয়ার সংখ্যা কমায় ফলে তখন প্রতিরোধ সিস্টেম চালু হয়ে যায়।

বায়োফিল্ম নষ্ট

কিছু ব্যাকটেরিয়া নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষার জন্য কোষ প্রাচীরের বাইরে দুর্ভেদ্য বায়োফিল্ম তৈরি করে। রিফামপিসিনের মতো এন্টিবায়োটিক এই সব বায়োফিল্ম দুর্বল করে অন্য ওষুধের যাবার পথ করে দেয়।

টক্সিন তৈরি বন্ধ

কি কিছু ব্যাকটেরিয়া টক্সিন তৈরি করে থাকে।এন্টিবায়োটিক ব্যাকটেরিয়ার টক্সিন তৈরির ক্ষমতা নষ্ট করে দেয়। ফলে শরীরের উপসর্গ সমূহ কমে যায়। যেমন :- ম্যাক্রোলিড।

যৌথভাবে

কিছু কিছু এন্টিবায়োটিক একক ভাবে খুব কম কাজ করে থাকে তখন তাদের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য যৌথভাবে প্রয়োগ করা হয়। যেমন :- এমক্সিসিলিন + ক্ল্যাভুলেনিক এসিড।

পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া

এন্টিবায়োটিক নিয়ম মেনে খেলে বা নিয়ম না মেনে খেলে বা অতিরিক্ত খেলে শরীরে কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা যায়। বয়স, লিঙ্গ বা মানুষ ভেদে বিভিন্ন রকম পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হতে পারে। সেগুলো দেয়া হলো :-

  • মাথা ব্যথা
  • বমি
  • বমিভাব
  • এলার্জি
  • পেট ব্যথা
  • ডায়রিয়া
  • কোষ্ঠকাঠিন্য

জটিলতা

অতিরিক্ত নিলে বা নিয়ম মেনে না গ্ৰহণ করলে কিছু জটিলতা হতে পারে। যথা :-

  • অন্ত্রে আলসার
  • কিডনি বা লিভারের কর্মক্ষমতা হ্রাস
  • ছত্রাকের আক্রমণ
  • শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা হ্রাস

এন্টিবায়োটিক এর অন্যান্য খুঁটিনাটি তথ্য

সতর্কতা

নিম্নলিখিত সতর্কতা সমূহ মেনে চলা উচিত। যথা :-

  • নিজে নিজে ওষুধ না খেয়ে চিকিৎসকের পরামর্শে খাওয়া
  • সমস্যা বেশি থাকলেও একসাথে অনেক ওষুধ না খেয়ে চিকিৎসকের দেয়া নিয়ম অনুযায়ী খাওয়া
  • গর্ভধারণ করলে ও স্তন্যপানকারী বাচ্চা থাকলে  চিকিৎসককে জানানো
  • এলার্জির সমস্যা থাকলে চিকিৎসককে জানানো
  • ওষুধের ডোজ শেষ করা মাঝপথে বন্ধ না করা।
  • মেয়াদ শেষ হ‌ওয়া ওষুধ না খাওয়া।
  • নিয়ম মেনে সময়ের ওষুধ সময়ে খাওয়া।
  • ওষুধের খাওয়ার পাশাপাশি পুষ্টিকর খাবার খেয়ে শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানো।

সংরক্ষণ

অধিকাংশ এন্টিবায়োটিক সাধারণ তাপমাত্রায় প্যাকেটে রাখা যায়।তবে কিছু তরল এন্টিবায়োটিক ফ্রিজে সংরক্ষণ করতে হয়।

এন্টিবায়োটিক কি শুধুমাত্র ব্যাকটেরিয়ার উপর কাজ করে?

না। এন্টিবায়োটিক শুধু মাত্র ব্যাকটেরিয়ার উপর নয়।ভাইরাস ও প্যারাসাইটের উপর‌ও কাজ করে থাকে। যেমন :- মেট্রোনিডাজল একই সাথে ব্যাকটেরিয়া ও প্রোটোজোয়ার বিরুদ্ধে কাজ করে থাকে।

উপসংহার

যত তত্র এন্টিবায়োটিকের অসচেতন ব্যবহারের ফলে অধিকাংশ এন্টিবায়োটিক মানব শরীরে রেজিস্ট্যান্স হয়ে যাচ্ছে।কাজ করছে না। তাই এন্টিবায়োটিক নিয়ে সচেতনতা বৃদ্ধির মাধ্যমে আমরা সুস্থ সমাজ গড়ে তুলতে পারি। সঠিক চিকিৎসক, এন্টিবায়োটিক, সময় ও ডোজ চেনা জরুরি হয়ে পড়েছে। 

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url