পেটের আল্ট্রাসনোগ্ৰাম (abdominal ultrasonography)
পেটের আল্ট্রাসনোগ্ৰাম (abdominal ultrasonography)
কোনো ধরনের অস্ত্রোপচার ছাড়াই পেটের ভেতরের অবস্থা পর্যবেক্ষণের সহজ উপায় হচ্ছে আল্ট্রাসনোগ্রাম। আধুনিক চিকিৎসা ব্যবস্থায় পেটের আল্ট্রাসনোগ্রাম খুবই কার্যকর একটি টেস্ট। আসুন জেনে নেই পেটের আল্ট্রাসনোগ্ৰাম সম্পর্কে খুটিনাটি সবকিছু ।
পেটের আল্ট্রাসনোগ্ৰাম কি
পেটের আল্ট্রাসাউন্ড হল এক ধরণের অ-আক্রমণাত্মক, নিরাপদ এবং অত্যন্ত কার্যকরী ইমেজিং পরীক্ষা। যা পেটের ভেতরের অঙ্গ এবং কাঠামো সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা দেয়|যা বিভিন্ন ডায়াগনস্টিক পরীক্ষার অংশ হিসাবে, বিভিন্ন রোগ এবং অবস্থা সনাক্ত করতে সাহায্য করে থাকে।এর মধ্যে রয়েছে লিভার, পিত্তথলি, অগ্ন্যাশয়, পিত্তনালী, প্লীহা এবং পেটের মহাধমনী। এটি শরীরের বাইরে থেকে পেটের ভিতরের অঙ্গ এবং গঠন দেখার সুযোগ করে দেয়।
প্রকার
পেটের
আল্ট্রাসনোগ্ৰাফী ৩ প্রকার। যথা:-
উপরের পেটের আল্ট্রাসনোগ্ৰাম
এর মাধ্যমে লিভার, অগ্ন্যাশয়, পিত্তথলি, মহাধমনী, পাকস্থলীর উপরের অংশের রোগ নির্ণয় করা হয়।নিচের পেটের আল্ট্রাসনোগ্ৰাম
এর মাধ্যমে কিডনি, মুত্রাশয়, মুত্রনালী, অন্ত্র, মহাধমনী, জননাঙ্গ, পাকস্থলীর নিচের অংশের রোগ নির্ণয় করা হয়।পুরো পেটের আল্ট্রাসনোগ্ৰাম
এর মাধ্যমে লিভার, অগ্ন্যাশয়, পিত্তথলি, কিডনি, মুত্রাশয়, মুত্রনালী, অন্ত্র, মহাধমনী, জননাঙ্গ, পাকস্থলীর রোগ নির্ণয় করা হয়।উপাদান
আল্ট্রাসাউন্ড
পরীক্ষাতে প্রয়োজনীয় উপাদান।
আল্ট্রাসাউন্ড
মেশিন
- কম্পিউটার কনসোল
- ভিডিও মনিটর
- সংযুক্ত ট্রান্সডিউসার :- হাতে ধরা ছোট মাইক্রোফোনের মতো যন্ত্র।
জেল
:- শরীরে দাগ বা কাপড়
বিবর্ণ করে না।
পরীক্ষা
রুম
শোয়ার
টেবিল
আল্ট্রাসনোগ্ৰাফার
রুগী
সময়
পেটের আল্ট্রাসাউন্ড সম্পন্ন করতে সাধারণত ১৫-৩০ মিনিট বা তার চেয়ে কিছুটা কম বা বেশি সময় লাগে পরিস্থিতির উপর নির্ভর করে ।
পুর্ব প্রস্তুতি
পানি পান
আল্ট্রাসাউন্ডের
ধরণের উপর নির্ভর করে
পানি পানের প্রস্তুতি নির্ভর করে।যথা :-
লিভার,
পিত্তথলি, প্লীহা এবং অগ্ন্যাশয়ের জন্য,
পরীক্ষার আগের দিন সন্ধ্যায়
চর্বিমুক্ত খাবার খেতে বলা হয়
এবং তারপর পরীক্ষার আট থেকে ১২
ঘন্টা আগে থেকে খেতে নিষেধ
করা হয়।
কিডনির আল্ট্রাসাউন্ডের জন্য, আপনার মূত্রথলি পূরণ করার জন্য পরীক্ষার প্রায় এক ঘন্টা আগে চার থেকে ছয় গ্লাস পানি পান করতে বলা হয়। অন্ত্রে গ্যাস জমা হওয়া এড়াতে পরীক্ষার আট থেকে ১২ ঘন্টা আগে থেকে খাওয়া এড়িয়ে চলতে বলা হয়।
মহাধমনীর আল্ট্রাসাউন্ডের জন্য, পরীক্ষার আগে আট থেকে ১২ ঘন্টা আগে থেকে খাওয়া এড়িয়ে চলতে বলা হয়।
খাওয়া/পান
সকালের অ্যাপয়েন্টমেন্টের জন্য
আগের সন্ধ্যায় চর্বি মুক্ত রাতের খাবার। মধ্যরাত থেকে পরীক্ষা পর্যন্ত সকল ধরনের খাওয়া বা পান থেকে বিরত থাকা।বিকেলের অ্যাপয়েন্টমেন্টের জন্য
সকাল ৯টার আগে তরল জাতীয় নাস্তা (দুধ ছাড়া)। নাস্তার পর থেকে সকল ধরনের খাওয়া বা পান থেকে বিরত থাকা।ঔষধ
ঔষধ অল্প পরিমাণ পানির সাথে খাওয়া। পরীক্ষার
ধাপসমূহ
আল্ট্রাসাউন্ড
করার পুর্বে নিম্নোক্ত কাজ গুলো করা
হয়। যথা:-
- পরীক্ষার আগে ধূমপান বা তামাক চিবানো এড়িয়ে চলুন কারণ এই গুলিতে থাকা নিকোটিন রক্তনালী সংকোচনের কারণ হতে পারে যা পরীক্ষার ফলাফলকে পরিবর্তন করতে পারে।
- পরীক্ষার জায়গায় তেল বা ক্রিম লাগাবেন না।
- আরামদায়ক, ঢিলেঢালা পোশাক পরুন।যেনো পরীক্ষার স্থান প্রয়োজনের সময় উন্মুক্ত করতে পারেন।
- গয়না বা অন্যান্য ধাতব জিনিসপত্র খুলে ফেলতে বলা হয় যা স্ক্যানে বাধা সৃষ্টি করতে পারে।
- পরীক্ষার ঠিক আগে নির্দিষ্ট পরিমাণে পানি পান করতে বলতে পারে অথবা নাও বলতে পারে।
- পোশাক খুলে ফেলতে বলা হলে, পরার জন্য একটি গাউন দেওয়া হবে।
- এরপর পরীক্ষার টেবিলে শুতে বলা হবে।
- পেটের কোন অংশটি পরীক্ষা করা হবে তার উপর নির্ভর করে পরীক্ষার টেবিলে পিছন বা পাশ ফিরে শুয়ে থাকতে বলা হবে।
- কয়েক সেকেন্ডের জন্য আপনার শ্বাস ধরে রাখতে বলতে পারে।
- আল্ট্রাসাউন্ড জেল শরীরের যে অংশে আল্ট্রাসাউন্ড পরীক্ষা করা হবে সেখানে দেয়া হবে যাতে ট্রান্সডিউসার প্রোবটি মসৃণভাবে গ্লাইডিং করতে পারে। স্বচ্ছ জেলটি শীতল এবং ভেজা অনুভূত হবে।
- ট্রান্সডিউসার পরীক্ষা করার স্থানে আনা হবে। ত্বক ও জেলের উপর দিয়ে সামনে পিছনে ঘুরাবেন যতক্ষণ পর্যন্ত না দরকারী স্থান গুলো দেখতে পান।
- অস্বস্তি লাগতে পারে তারপরও পুরো প্রক্রিয়াটির সময়কালে স্থিরভাবে শুয়ে থাকতে হবে।
- স্ক্যান শেষে, ত্বকের পৃষ্ঠ থেকে জেল পরিষ্কার করার জন্য টিস্যু পেপার সরবরাহ করা হবে।
পরীক্ষার পর করণীয়
পেটের আল্ট্রাসাউন্ডের পর কোন বিশেষ যত্নের প্রয়োজন হয় না। ডাক্তার কোন বিশেষ পরামর্শ না দিলে স্বাভাবিক খাদ্যাভ্যাস এবং কার্যকলাপ পুনরায় শুরু করা যাবে। পেটের উপরে দেওয়া জেল মুছে ফেলতে হবে।পরীক্ষার পর কি করা হয়
- পেটের আল্ট্রাসাউন্ড পরীক্ষা করতে সাধারণত ১৫-৩০ মিনিট সময় নেয়।
- স্ক্যানের আগে বা চলাকালীন স্বাস্থ্য বিষয়ে কিছু জিজ্ঞাসা করতে পারে।
- স্ক্যানের পরেই পরীক্ষা রুম থেকে বের হয়ে অপেক্ষা কক্ষে অপেক্ষা করতে বলবে।
- প্রক্রিয়াটি শেষ হওয়ার পরে, রেডিওলজিস্ট ফলাফল বিশ্লেষণ করবেন এবং আপনার অবস্থার নির্ণয় করবেন।
- কিছুক্ষণ পর অথবা একই দিনে রিপোর্ট পাবেন।
পদার্থবিদ্যার নীতি
আল্ট্রাসাউন্ডে
পদার্থবিদ্যার যে নীতিকে ব্যবহার
করা হয়েছে ।
আল্ট্রাসাউন্ড
ইমেজিং বাদুড়, জাহাজ,নৌকা এবং সাবমেরিনে
যে সোনার ব্যবহার করে সেই একই
নীতি ব্যবহার করে। যখন শব্দ
তরঙ্গ কোনও প্রতিবন্ধকে বাধা
পায়, তখন পিছনে ফিরে
আসে বা প্রতিধ্বনিত হয়।
এই প্রতিধ্বনি তরঙ্গগুলি পরিমাপ করে, প্রতিবন্ধকটি কত
দূরে অবস্থিত, এর আকার, আকৃতি
নির্ধারণ করা সম্ভব। প্রতিবন্ধকটি
কঠিন, তরল না কঠিনের
মধ্যে তরল তাও নির্ধারণ
করা যায়।
মেশিন যেভাবে কাজ করে
আল্ট্রাসাউন্ডে
একটি ট্রান্সডিউসার ব্যবহার করা হয় যা
খুব বেশি ফ্রিকোয়েন্সির আল্ট্রাসাউন্ড
তরঙ্গ প্রেরণ করে। যে তরঙ্গ
খালি কানে শোনা যায়
না।পরীক্ষার সময় বিভিন্ন ক্ষমতার
ট্রান্সডিউসার ব্যবহার করা হতে পারে।
আল্ট্রাসাউন্ড ট্রান্সডিউসারটি ত্বকের উপর স্থাপন করা
হয়। ট্রান্সডিউসার এবং ত্বকের মাঝে
একটি আল্ট্রাসাউন্ড জেল দেওয়া হয়
যাতে ত্বকের উপর দিয়ে ট্রান্সডিউসারটি মসৃণভাবে চলাচল করতে পারে। জেল
দেওয়ার জন্য ত্বক এবং
ট্রান্সডিউসারের মধ্যে বাতাস দূর হয়ে যায়,
যার কারণে শব্দ ভালোভাবে পরিবাহিত
হতে পারে। যখন ট্রান্সডিউসারটিকে ত্বকের বিরুদ্ধে
চাপ দেওয়া হয়, তখন এটি
শরীরে উচ্চ-ফ্রিকোয়েন্সি শব্দ
তরঙ্গের ছোট ছোট স্পন্দন
পাঠায়। আল্ট্রাসাউন্ড তরঙ্গগুলি ত্বকের মধ্য দিয়ে অঙ্গ
এবং কাঠামো গুলোতে প্রেরণ করে। তখন ট্রান্সডিউসারের
সংবেদনশীল রিসিভার শব্দের পিচ এবং দিকের
ক্ষুদ্র পরিবর্তন রেকর্ড করে। শব্দ তরঙ্গগুলি
বিভিন্ন গতিতে বিভিন্ন ধরনের টিস্যুর
মধ্যে দিয়ে যায়। যেমন :- হাড়ের টিস্যুর মধ্য দিয়ে দ্রুত
এবং বাতাসের মধ্য দিয়ে ধীরে।
শব্দ তরঙ্গগুলি অঙ্গগুলি থেকে প্রতিধ্বনিত হয়ে
ট্রান্সডিউসারে ফিরে আসে। আল্ট্রাসাউন্ড চিত্রটি তাৎক্ষণিকভাবে একটি ভিডিও মনিটরে
দৃশ্যমান হয়। কম্পিউটারটি শব্দের
তীব্রতা (প্রশস্ততা), পিচ (ফ্রিকোয়েন্সি) এবং
ট্রান্সডিউসারে ফিরে আসতে যে
সময় লাগে, যতো অংশ ফেরত
আসে বা যে গতিতে
ফেরত আসে অর্থাৎ প্রতিফলিত
তরঙ্গগুলির উপর ভিত্তি করে
চিত্র তৈরি করে। মনিটরে
রিয়েল-টাইম ছবি হিসাবে
প্রদর্শন করে। চলমান ছবির
এক বা একাধিক ফ্রেম
স্থির চিত্র হিসাবে ধারণ করে।চাইলে
ছবির ছোট ভিডিও লুপ
হিসেবেও সংরক্ষণ করা যায়।
রোগ নির্ণয়ের সহায়ক
এটি
পেটের ভেতরের বিভিন্ন রোগ নির্ণয়ের সহায়ক
হিসেবে কাজ করে। যেমন:
- ফোড়া (পুঁজ সংগ্রহ)
- সিস্ট (তরল সংগ্রহ)
- সূঁচ স্থাপন (পেটের টিস্যু বায়োপসি)
রোগ নির্ণয়
পেটের
আল্ট্রাসাউন্ডের মাধ্যমে যেসব রোগ নির্ণয়
করা যায়। সেগুলো দেয়া হলো :-
লিভারের রোগ
ফ্যাটি লিভার
ফ্যাটি
লিভারের হলো লিভারের কোষের
মধ্যে চর্বি জমার মাত্রা বৃদ্ধি
পাওয়া। সাধারণত অ্যালকোহল গ্রহণ বা অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাসের
কারণে ফ্যাটি লিভার হয়ে থাকে। আল্ট্রাসাউন্ড
ফ্যাটি লিভারের সাথে সম্পর্কিত লিভারের
গঠন এবং আকারের পরিবর্তন
সনাক্ত করতে সহায়তা করে।
হেপাটাইটিস
হেপাটাইটিস
বি বা সি এর
মতো ভাইরাল সংক্রমণের কারণে লিভারের প্রদাহ আল্ট্রাসাউন্ডের মাধ্যমে নির্ণয় করা যেতে পারে।
আল্ট্রাসনোগ্রাফিতে লিভারের ফোলাভাব, ইকোটেক্সচারের পরিবর্তন এবং লিভারের সমস্যা
ধরা পড়ে।
লিভার সিরোসিস
দীর্ঘস্থায়ী
প্রদাহের কারণে লিভারের টিস্যুতে দাগ লিভার সিরোসিসের
কারণ হতে পারে।পেটের আল্ট্রাসাউন্ডে
সিরোসিসের সাধারণ দাগ এবং আকারের
পরিবর্তন সনাক্ত করতে পারে।
লিভার টিউমার
লিভারের
বেনাইন এবং ম্যালিগন্যান্ট উভয়
টিউমারই আল্ট্রাসাউন্ডের মাধ্যমে সনাক্ত করা যেতে পারে।
এছাড়াও
পেটের আল্ট্রাসাউন্ডের মাধ্যমে লিভারের আরো কিছু রোগ
ধরা পরে।যেমন:-
- লিভারের বৃদ্ধি/হেপাটোমেগালি
- লিভারের ফোড়া বা সিস্ট
- লিভারের সংক্রমণ
- লিভারের প্রদাহ
- লিভারে আঘাতমূলক ক্ষতি
- অ্যালকোহলিক লিভার রোগ
পিত্তথলির সমস্যা
পিত্তথলির পাথর
পিত্তথলির
পাথর পিত্তথলিতে তৈরি হওয়া এক
ধরনের কঠিন
পদার্থ।পেটের আল্ট্রাসাউন্ড পিত্তথলির আকার, সংখ্যা সহজেই শনাক্ত করতে পারে।
কোলেসিস্টাইটিস
পিত্তথলির
পাথর পিত্তনালীতে বাধা সৃষ্টি করলে
পিত্তথলির প্রদাহ হয় । পেটের
আল্ট্রাসাউন্ডে পিত্তথলিতে ফোলাভাব বা দেয়াল পুরু
হতে দেখা যায়, যা
কোলেসিস্টাইটিসের সাধারণ রূপ।
পেটের
আল্ট্রাসাউন্ডের মাধ্যমে পিত্তথলির আরো কিছু রোগ
ধরা পরে।যেমন:-
- পলিপস
- কোলেস্টেসিস
- পিত্তথলিতে লিকেজ বা বাধা।
কিডনির রোগ
কিডনিতে পাথর
কিডনি
বা মূত্রনালীর মধ্যে পাথরের আকার, আকৃতি এবং অবস্থান দেখে,
পেটের আল্ট্রাসাউন্ড কিডনির পাথর শনাক্ত করে।
হাইড্রোনেফ্রোসিস
প্রস্রাব
জমা হওয়ার কারণে কিডনিতে ফুলে যাওয়াকে হাইড্রোনেফ্রেসিস
বলে।পেটের আল্ট্রাসাউন্ড কিডনিতে ফোলাভাবের মাত্রা এবং মূত্রতন্ত্রে সম্ভাব্য
বাধা সনাক্ত করতে পারে।
পাইলোনেফ্রাইটিস
পাইলোনেফ্রাইটিস
হলো কিডনির এক ধরনের সংক্রমণ।
যার ফলে কিডনি ফুলে
যায় বা কাঠামোতে পরিবর্তন
ঘটে। পেটের আল্ট্রাসাউন্ড এই পরিবর্তনগুলি তুলে
ধরতে পারে।
কিডনি সিস্ট
বৃদ্ধ
বয়সে কিডনিতে সিস্ট তৈরি হওয়া
বা বৃদ্ধি পাওয়া স্বাভাবিক। পেটের আল্ট্রাসাইন্ডে কিডনির সিস্ট ধরা পড়ে।
কিডনি টিউমার
বয়স
বৃদ্ধির সাথে কিডনিতে টিউমার
তৈরি হওয়াও স্বাভাবিক
ঘটনা।পেটের আল্ট্রাসাউন্ড এই টিউমার শনাক্ত
করতে পারে।
অগ্ন্যাশয়ের রোগ
প্যানক্রিয়েটাইটিস
প্যানক্রিয়েটাইটিস হলো অগ্ন্যাশয়ের এক ধরনের প্রদাহ। যা সাধারণত পিত্তথলির পাথর বা অ্যালকোহল গ্ৰহণের কারণে হয়। এর ফলে অগ্ন্যাশয় ফুলে যায়। এটা পেটের আল্ট্রাসাউন্ডের মাধ্যমে ধরা পড়ে।
অগ্ন্যাশয়ের নালীতে বাধা
অগ্ন্যাশয়ের
নালীতে বাধা থাকলে তা
পেটের আল্ট্রাসাউন্ডের মাধ্যমে ধরা পড়ে।এই বাধা
অনেক কারণে হতে পারে যেমন:-
দেয়ালে প্রদাহ, পাথর।
অগ্ন্যাশয়ের সিস্ট
পেটের
আল্ট্রাসাউন্ড অগ্ন্যাশয়ের সিস্ট সনাক্ত করতে পারে।
অগ্ন্যাশয়ের টিউমার
পেটের
আল্ট্রাসাউন্ডের মাধ্যমে অগ্ন্যাশয়ের অস্বাভাবিক কোনো বৃদ্ধি ধরা
পড়ে। যা টিউমারের রূপ।
প্লীহার অস্বাভাবিকতা
স্প্লেনোমেগালি / বর্ধিত প্লীহা
প্লীহা
বিভিন্ন কারণে বৃদ্ধি পেতে পারে, যেমন
সংক্রমণ, লিভারের রোগ, বা রক্তের
রোগ। পেটের আল্ট্রাসাউন্ড প্লীহার আকার নির্ধারণ করতে
এবং কোনও অস্বাভাবিক বৃদ্ধি
সনাক্ত করতে সাহায্য করে।
স্প্লীহার সিস্ট
প্লীহার
সিস্ট পেটের আল্ট্রাসাউন্ড এর মাধ্যমে সনাক্ত
করা যায়।
প্লীহার টিউমার
পেটের
আল্ট্রাসাউন্ড এর মাধ্যমে প্লীহার
টিউমার ধরা পড়ে।
অন্ত্রের রোগ
অ্যাপেন্ডিসাইটিস
অ্যাপেন্ডিক্সের
প্রদাহ, যা অ্যাপেন্ডিসাইটিস নামে
পরিচিত। এটি একটি জরুরি
অবস্থা যার জন্য দ্রুত
রোগ নির্ণয়ের প্রয়োজন হয়। পেটের আল্ট্রাসাউন্ড
অ্যাপেন্ডিক্সটি স্ফীত এবং ফুলে গেছে
কিনা তা নির্ধারণ করতে
পারে।
অন্ত্রের বাধা বা অবস্ট্রাকশন
এর মাধ্যমে অন্ত্রের মধ্য দিয়ে খাদ্য
বা তরল যেতে পারে
না। আল্ট্রাসাউন্ড ব্লকেজের অবস্থান এবং এলাকা দেখিয়ে
অন্ত্রের বাধার অবস্থান জানতে সাহায্য করে।
ক্রোহন'স ডিজিজ
এটি
এক ধরণের প্রদাহজনক অন্ত্রের রোগ (IBD) যা গ্যাস্ট্রো ইনটেস্টিনাল
ট্র্যাক্টের (GI ট্র্যাক্ট) যেকোনো অংশে হতে পারে।
পেটের আল্ট্রাসাউন্ড অন্ত্রের মধ্যে প্রদাহ, পুরু হওয়া বা
দাগ বা স্কারের স্থান
প্রকাশ করে।
এছাড়াও
পেটের আল্ট্রাসাউন্ডের মাধ্যমে অন্ত্রের আরো কিছু রোগ
ধরা পরে।যেমন:-
- সংক্রমণ
- প্রদাহ
- ডাইভার্টিকুলাইটিস।
মূত্রাশয় এবং মূত্রনালীর সমস্যা
মূত্রাশয়ের পাথর
মূত্রাশয়ের
পাথর হল মূত্রাশয়ের মধ্যে
শক্ত জমা হওয়া কঠিন
পদার্থ। এই পাথরগুলি সনাক্ত
করতে পারে আল্ট্রাসাউন্ড।
মূত্রাশয়ের টিউমার
মূত্রাশয়ের
অস্বাভাবিক বৃদ্ধি বা টিউমার আল্ট্রাসাউন্ডের
মাধ্যমে সনাক্ত করা হয়। যা
পরবর্তীতে বায়োপসি
পরীক্ষার কাজেও লাগে।
এছাড়াও
পেটের আল্ট্রাসাউন্ডের মাধ্যমে মূত্রাশয় ও মূত্রনালীর আরো
কিছু রোগ ধরা পরে।যেমন:-
- মূত্রনালী বা মূত্রাশয়ের আঘাত
- মূত্রনালীর বাধা, সংকীর্ণতা বা প্রসারণ
- মূত্রাশয়ের সংক্রমণ বা প্রদাহ
- মূত্রাশয়ের ডাইভার্টিকুলা
- মূত্রাশয়ের ভর বা অস্বাভাবিক বৃদ্ধি
- হেমাটুরিয়ার মূল্যায়ন
- মূত্র ধারণ।
রক্তনালীর অস্বাভাবিকতা
পেটের অ্যাওরটিক অ্যানিউরিজম
পেট
এবং শরীরের নিচের অংশে রক্ত সরবরাহকারী
বৃহৎ রক্তনালী (অ্যাওর্টা) যখন বর্ধিত বা
দুর্বল হয়ে যায় তখন
তাকে পেটের অর্টিক অ্যানিউরিজম বলে। পেটের আল্ট্রাসাউন্ড
এর আকার এবং ফেটে
যাওয়ার ঝুঁকি সনাক্ত করতে পারে।
পোর্টাল হাইপারটেনশন
লিভার
সিরোসিসের কারণে লিভারের শিরাগুলির মধ্যে রক্তচাপ বৃদ্ধি পেটের আল্ট্রাসাউন্ডের মাধ্যমে সনাক্ত করা যায়।
এছাড়াও
পেটের আল্ট্রাসাউন্ডের মাধ্যমে রক্তনালীর আরো কিছু রোগ
ধরা পরে।যেমন:-
- অ্যাথেরোস্ক্লেরোসিস
- স্টেনোসিস
- রক্তপাত বা আঘাত
- সংকোচন।
স্ত্রীরোগ সংক্রান্ত অবস্থা
ডিম্বাশয়ের সিস্ট
ডিম্বাশয়ের
সিস্ট হল তরল পদার্থে
ভরা থলি যা ডিম্বাশয়ের
মধ্যে থাকে।পেটের আল্ট্রাসাউন্ড ডিম্বাশয়ের সিস্ট, তার আকার এবং
সম্ভাব্য জটিলতা সনাক্ত করতে পারে।
ফাইব্রয়েড
জরায়ু
ফাইব্রয়েড হল অ-ক্যান্সারযুক্ত
টিউমার যা জরায়ুর প্রাচীরের
মধ্যে থাকে। আল্ট্রাসাউন্ড ফাইব্রয়েডের অস্তিত্ব, আকার এবং অবস্থান
দেখাতে পারে।
একটোপিক প্রেগন্যান্সি
জরায়ুর
বাইরে ভ্রূণের অস্বাভাবিক অবস্থান পেটের আল্ট্রাসাউন্ড এর মাধ্যমে সনাক্ত
করা যায়।
প্রোস্টেটের অবস্থা
প্রোস্টেটাইটিস
পেটের
আল্ট্রাসাউন্ডের মাধ্যমে প্রোস্টেট গ্রন্থির প্রদাহ সনাক্ত করা যায়। এটি
প্রস্রাবের অভ্যাসে পরিবর্তন করে অস্বস্তির কারণ
হয়ে দাঁড়ায়।
প্রোস্টেটের বৃদ্ধি
একটি
বর্ধিত প্রোস্টেট, যা বার্ধক্যের সাথে
সম্পর্কিত। যা আল্ট্রাসাউন্ডের
মাধ্যমে সনাক্ত করা যায়।
অন্যান্য পেটের রোগ
আল্ট্রাসাউন্ড
পেটের অস্বাভাবিক বৃদ্ধি সনাক্ত করতে পারে যা
সরাসরি নির্দিষ্ট অঙ্গের সাথে সম্পর্কিত নাও
হতে পারে। এর মধ্যে বেনাইন
এবং ম্যালিগন্যান্ট উভয় টিউমারই অন্তর্ভুক্ত।
আরো কিছু রোগ ধরতে
পারে যেমন :- হার্নিয়া,পেটের গহ্বরে তরল।
ফলাফলের পরিবর্তন
কিছু নির্দিষ্ট কারণ বা অবস্থা পরীক্ষার ফলাফলে পরিবর্তন আনতে পারে। এর মধ্যে রয়েছে:- গুরুতর স্থূলতা
- অন্ত্রে বেরিয়ামের উপস্থিতি (সাম্প্রতিক বেরিয়াম পদ্ধতি)
- অন্ত্রের গ্যাস
উপসংহার
পেটের
আল্ট্রাসনোগ্রাম একটি নিরাপদ,ব্যথাহীন
ও ঝুঁকিমুক্ত পদ্ধতি। যা নির্ভরযোগ্য ও
সহজ প্রক্রিয়া। যা রোগ নির্ণয়ে
গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। নির্ভয়ে, নিসঙ্কোচে ,নিশ্চিন্তে চিকিৎসকের পরামর্শে আল্ট্রাসনোগ্রাম করানো যায়।
পেটের আল্ট্রাসাউন্ডের পূর্বে খাওয়া যাবে কিনা??
বেশিরভাগ
ক্ষেত্রেই, পেটের আল্ট্রাসাউন্ডের ৮ থেকে ১২
ঘন্টা আগে খাওয়া বা
পান বন্ধ করতে বলা
হয়। এটি পেটের অংশে
গ্যাস জমা হওয়া রোধ
করে, যা ফলাফলকে প্রভাবিত
করতে পারে।
আল্ট্রাসাউন্ড করা শরীরের জন্য ঝুকি কিনা??
না।
কারণ এই পদ্ধতিতে কোনো
প্রকার বিকিরণ ব্যবহার করা হয় না
এক্স-রে এর মতো।
যার কারণে এর কোন ঝুঁকি
জানা নেই। এটি একটি
নিরাপদ, ব্যথাহীন পদ্ধতি।যদি ব্যথাযুক্ত বা কোমল জায়গার
উপর চাপ দেয়া হয়
তবে কিছুক্ষণের জন্য অস্বস্তি হতে
পারে।