উচ্চ রক্তচাপ: কারণ, লক্ষণ ও ঘরোয়া চিকিৎসা জানুন

 উচ্চ রক্তচাপ: কারণ, লক্ষণ ঘরোয়া চিকিৎসা জানুন

উচ্চ রক্তচাপের ঘরোয়া চিকিৎসা

আপনি কি প্রায়ই হঠাৎ মাথাব্যথা, অস্থিরতা বা বুক ধড়ফড়ের মতো সমস্যায় ভোগেন? এটি হতে পারে উচ্চ রক্তচাপের লক্ষণ। এটি একটি নীরব ঘাতক হিসেবে পরিচিত। এটি নিয়ন্ত্রণে না রাখলে হৃদরোগ, স্ট্রোকসহ নানা জটিলতা দেখা দিতে পারে। এটি ধীরে ধীরে শরীরকে ভেতর থেকে ক্ষতিগ্রস্ত করে ফেলে।তাই আসুন, আগে জানি এর কারণ, লক্ষণ এবং ঘরোয়া চিকিৎসা।

উচ্চ রক্তচাপ কি

উচ্চ রক্তচাপ হলো যখন রক্ত ​​ধমনীর দেয়ালের উপর রক্ত ক্রমাগতভাবে খুব বেশি চাপ দেয়। এটি সময়ের সাথে সাথে ধমনীর দেয়ালের ক্ষতি করে।এটি মানুষের শরীরে লক্ষণ প্রকাশ ছাড়াই দীর্ঘ দিন থাকতে পারে। হার্ট অ্যাটাক স্ট্রোকের মতো গুরুতর জটিলতা সৃষ্টি করে। একে "হাইপারটেনশন" বলে।

পরিমাপক

রক্তচাপ পরিমাপ করা হয় মিলিমিটার পারদ (mm Hg) এ। সাধারণভাবে উচ্চ রক্তচাপ হল ১৩০/৮০ mm Hg বা তার বেশি রক্তচাপের মান।

প্রকারভেদ

আমেরিকান কলেজ অফ কার্ডিওলজি এবং আমেরিকান হার্ট অ্যাসোসিয়েশন রক্তচাপকে চারটি সাধারণ শ্রেণীতে ভাগ করে। যথা:

স্বাভাবিক/ আদর্শ রক্তচাপ

রক্তচাপ ১২০/৮০ মিমি এইচজি(mm Hg) -এর কম।

বাড়তি রক্তচাপ

উপরের সংখ্যাটি ১২০ থেকে ১২৯ মিমি এইচজি(mm Hg) পর্যন্ত এবং নীচের সংখ্যাটি ৮০ মিমি এইচজি(mm Hg)-এর উপরে নয়।

পর্যায় উচ্চ রক্তচাপ

উপরের সংখ্যাটি ১৩০ থেকে ১৩৯ মিমি এইচজি (mm Hg) বা নীচের সংখ্যার মধ্যে থাকে অথবা নীচের সংখ্যাটি ৮০ থেকে ৮৯ মিমি এইচজি (mm Hg) -এর মধ্যে থাকে।

পর্যায় উচ্চ রক্তচাপ

উপরের সংখ্যাটি ১৪০ মিমি এইচজি (mm Hg) বা তার বেশি অথবা নীচের সংখ্যাটি ৯০ মিমি এইচজি (mm Hg) বা তার বেশি।

জরুরি অবস্থার উচ্চ রক্তচাপ

উপরের সংখ্যাটি ১৮০ মিমি এইচজি (mm Hg) বা তার বেশি অথবা নীচের সংখ্যাটি ১২০ মিমি এইচজি (mm Hg) বা তার বেশি।

কারণের উপর ভিত্তি করে দুই ধরণের উচ্চ রক্তচাপের :

প্রাথমিক উচ্চ রক্তচাপ

এই ধরণের উচ্চ রক্তচাপের কারণগুলির মধ্যে রয়েছে বার্ধক্য এবং অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাত্রা (পর্যাপ্ত ব্যায়াম না করা)

মাধ্যমিক উচ্চ রক্তচাপ

এই ধরণের উচ্চ রক্তচাপের কারণগুলির মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন রোগ বা ওষুধ গ্ৰহণের জন্য।

প্রাথমিক এবং মাধ্যমিক উচ্চ রক্তচাপ একসাথে থাকতে পারে।

পরিস্থিতির ভিত্তিতে উচ্চ রক্তচাপের ধরণগুলি হল:

হোয়াইট কোট হাইপারটেনশন বা সাদা এপ্রন উচ্চ রক্তচাপ

  রক্তচাপ বাড়িতে স্বাভাবিক থাকে কিন্তু স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রে গেলে বাড়ে। সাধারণত দুশ্চিন্তার কারণে এইরকম হয়।

মুখোশযুক্ত উচ্চ রক্তচাপ

  রক্তচাপ স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রে স্বাভাবিক থাকে কিন্তু বাড়িতে আসলে বাড়ে। সাধারণত টেনশনের কারণে এমনটা হয়

স্থায়ী উচ্চ রক্তচাপ

  রক্তচাপ স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র এবং বাড়ি জায়গাতেই বাড়ে। এটাই সত্যিকারের উচ্চ রক্তচাপ।

রাতের উচ্চ রক্তচাপ

ঘুমানোর সময় রক্তচাপ বেড়ে যায়। অন্তর্নিহিত কিছু কারণে এমন হয়।

কারণ

রক্তচাপ দুটি বিষয় দ্বারা নির্ধারিত হয়: হৃদপিণ্ড কত রক্ত ​​পাম্প করে এবং ধমনীর মধ্য দিয়ে রক্ত ​​চলাচল কতটা কঠিন। হৃদপিণ্ড যত বেশি রক্ত ​​পাম্প করে এবং ধমনী যত সংকীর্ণ হয়, রক্তচাপ তত বেশি হয়।

উচ্চ রক্তচাপের দুটি প্রধান ধরণ রয়েছে। যথা :-

প্রাথমিক উচ্চ রক্তচাপ

এর কোনও একক, স্পষ্ট কারণ নেই।  সাধারণ কারণগুলির মধ্যে রয়েছে:

  • অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস (সোডিয়াম সমৃদ্ধ খাবার সহ)
  • শারীরিক কার্যকলাপের অভাব
  • পর্যাপ্ত ঘুমের অভাব
  • দুশ্চিন্তা
  • অ্যালকোহলযুক্ত পানীয় গ্রহণ
  • তামাক ব্যবহার (ধূমপান, ভ্যাপিং এবং ধোঁয়াবিহীন তামাক ব্যবহার সহ)

সেকেন্ডারি উচ্চ রক্তচাপ

এটি অন্তর্নিহিত অবস্থার কারণে হয়। যেসব অবস্থা এবং ওষুধের কারণে উচ্চ রক্তচাপ হতে পারে তার মধ্যে রয়েছে:

  • অ্যাড্রিনাল গ্রন্থির টিউমার
  • জন্মের সময় রক্তনালীর সমস্যা, যাকে জন্মগত হৃদরোগও বলে
  • কাশি এবং ঠান্ডা লাগার ওষুধ, কিছু ব্যথানাশক, জন্মনিয়ন্ত্রণ বড়ি এবং অন্যান্য প্রেসক্রিপশনের ওষুধ
  • বিনোদনমূলক ওষুধ যেমন : কোকেন এবং অ্যাম্ফিটামিনের মতো অবৈধ ওষুধ
  • কিডনি রোগ
  • অবস্ট্রাকটিভ স্লিপ অ্যাপনিয়া
  • থাইরয়েড সমস্যা
  • ইমিউনো সাপ্রেসেন্টস, NSAIDs এবং মৌখিক গর্ভনিরোধক (বড়ি)
  • প্রাথমিক অ্যালডোস্টেরনিজম (কনস সিনড্রোম)
  • রেনাল ভাস্কুলার রোগ, যেমন : রেনাল আর্টারি স্টেনোসিস

লক্ষণ

উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত বেশিরভাগ মানুষেরই কোনও লক্ষণ থাকে না, রিডিং বিপজ্জনকভাবে উচ্চ মাত্রায় পৌঁছালেও। কোনও লক্ষণ ছাড়াই বছরের পর বছর ধরে  উচ্চ রক্তচাপ থাকতে পারে।

উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত কিছু লোকের মধ্যে থাকতে পারে:

  • মাথাব্যথা
  • শ্বাসকষ্ট
  • নাক থেকে রক্তপাত

তবে, এই লক্ষণগুলি নির্দিষ্ট নয়। উচ্চ রক্তচাপ গুরুতর বা জীবন-হুমকির পর্যায়ে না পৌঁছানো পর্যন্ত এগুলি সাধারণত দেখা যায় না।

উচ্চ রক্তচাপের জরুরি অবস্থা

উচ্চ রক্তচাপের জরুরি অবস্থার লক্ষণ সমূহের মধ্যে রয়েছে:

  • শ্বাসকষ্ট
  • হঠাৎ তীব্র মাথাব্যথা
  • কানে গুঞ্জন
  • বুকে ব্যথা
  • ঝাপসা দৃষ্টি
  • বিভ্রান্তি
  • অস্বাভাবিক হৃদস্পন্দন
  • বুকে বা পিঠে হঠাৎ, তীব্র ব্যথা
  • উদ্বেগ
  • অবশভাব বা দুর্বলতা
  • মাথা ঘোরা
  • নাক থেকে রক্তপাত
  • কথা বলতে সমস্যা ওয়া
  • বমি বমি ভাব
  • বমি

কারা বেশি ঝুঁকিতে

  • যারা খাবারে লবন বেশি খায়
  • পরিবারের জৈবিক সদস্যদের উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ বা ডায়াবেটিস থাকলে
  • ৫৫ বছরের বেশি বয়সী হলে
  • কৃষ্ণাঙ্গ হলে।যেমন : আফ্রিকান, ক্যারিবিয়ান বা দক্ষিণ এশীয়
  • মানসিক দুশ্চিন্তাগ্ৰস্থরা
  • যাদের থাইরয়েডের সমস্যা আছে
  • দীর্ঘস্থায়ী কিডনি রোগ, মেটাবলিক সিনড্রোম, অবস্ট্রাকটিভ স্লিপ অ্যাপনিয়া বা থাইরয়েড, ডায়াবেটিস  রোগাক্রান্ত
  • ওজন বেশি বা মোটা হলে
  • অনিদ্রায় ভুগলে
  • যারা স্লিপ এপনিয়া বা ঘুমের শ্বাসকষ্টে ভোগে
  • গর্ভবতী নারী
  • পর্যাপ্ত ব্যায়াম না করলে
  • সোডিয়াম সমৃদ্ধ খাবার বেশি খেলে
  • ধূমপান বা তামাকজাত দ্রব্য, ভ্যাপিং ব্যবহারকারীরা মদ্যপান কারীরা
  • যাদের শরীরে পটাসিয়ামের ঘাটতি আছে
  • অত্যধিক ক্যাফেইন পান কারীরা
  • মানসিক আঘাতের স্বীকার শিশুরা
  • অলসরা
  • যারা অতিরিক্ত মিষ্টি খাবার খায়
  • যারা অস্বাস্থ্যকর চর্বি খায়
  • যারা বেশি ক্যালরির খাবার গ্ৰহণ করে
  • উদ্দীপক সেবনকারীরা যেমন: কোকেন, মেথামফেটামিন, "বাথ সল্ট"
  • অ্যান্টিডিপ্রেসেন্টস, ডিকনজেস্ট্যান্টস, হরমোনজনিত জন্মনিয়ন্ত্রণ বড়ি এবং নন-স্টেরয়েডাল অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি ওষুধ সেবনকারীরা

জটিলতা

রক্তচাপ যত বেশি এবং এটি যত বেশি সময় ধরে অনিয়ন্ত্রিত থাকবে, ক্ষতি তত বেশি হবে। অনিয়ন্ত্রিত উচ্চ রক্তচাপের ফলে জটিলতা দেখা দিতে পারে যার মধ্যে রয়েছে:

  • করোনারি আর্টারি ডিজিজ (সিএডি)
  • স্ট্রোক
  • উচ্চ ঘনত্বের লাইপোপ্রোটিন (HDL বা "ভাল") হ্রাস
  • হার্ট অ্যাটাক
  • বাম ভেনট্রিকুলার এট্রফি
  • হৃদযন্ত্রের বিকলতা
  • হাইপারগ্লাইসেমিয়া
  • পেরিফেরাল আর্টারি ডিজিজ
  • কিডনি বিকল
  • ইরেকটাইল ডিসফাংশন
  • এনিউরিজম
  • হৃদরোগ
  • গর্ভাবস্থায় জটিলতা
  • ট্রাইগ্লিসারাইড বৃদ্ধি
  • দৃষ্টিশক্তি হ্রাস
  • অ্যাথেরোস্ক্লেরোসিস (ধমনীতে প্লাক জমা হওয়া)
  • ভাস্কুলার ডিমেনশিয়া
  • মেটাবলিক সিনড্রোম

ঘরোয়া চিকিৎসা

বাড়তি উচ্চ রক্তচাপ বা স্টেজ 1 হাইপারটেনশন ঘরোয়া চিকিৎসাতেই উপকার হয়। নিচে উপায়গুলো দেয়া হলো :

স্বাস্থ্যকর ওজন বজায় রাখা

উচ্চতা, বয়স অনুযায়ী একটা নির্দিষ্ট ওজন বজায় রাখা উচিত ওজন বেশি বেশি হলে ওজন কমানোর দিকে মনোযোগ দেয়া উচিত

স্বাস্থ্যকর খাদ্য গ্রহণ করুন

দৈনিক খাবারের তালিকায় সুষম খাবার রাখা উচিতপরিমাণ মতো ফল, শাকসবজি, গোটা শস্য এবং কম চর্বিযুক্ত দুগ্ধজাত খাবার খাওয়া


উচ্চ রক্তচাপের ঘরোয়া চিকিৎসা


লবণ কমিয়ে দেয়া

খাবারের সময় পাতে কাঁচা লবণ খাবার বদ অভ্যাস বর্জন করতে হবে।লবণের প্রধান উপাদান সোডিয়াম।প্রতিদিন গ্রামের কম লবণ খাবার চেষ্টা করা। আদর্শভাবে, সোডিয়াম গ্রহণ প্রতিদিন 1,500 মিলিগ্রাম (mg) এর বেশি ওয়া উচিত নয়।প্রয়োজনে একবারে না কমিয়ে ধীরে ধীরে কমানো উচিত

পর্যাপ্ত পটাসিয়াম পান করা

ফল এবং শাকসবজিতে পটাসিয়াম বেশি থাকে। প্রতিদিন 3,500 থেকে 5,000 মিলিগ্রাম খাওয়ার চেষ্টা করা। ওষুধ বা পরিপুরক দিয়ে নয় বরং আমাদের চারপাশে প্রাপ্ত খাবার দিয়ে পটাসিয়ামের অভাব পূরণ করা উচিত পটাশিয়াম সমৃদ্ধ কিছু খাবারের মধ্যে রয়েছে কলা, অ্যাভোকাডো এবং আলু (খোসাসহ)

ক্যাফেইন পান না করা

অতিরিক্ত ক্যাফেইনযুক্ত পানীয় পরিহার করা। যেমন : - কফি, চা এবং কোলা সহ উচ্চ ক্যাফেইনযুক্ত পানীয়।এগুলো শরীরে উদ্দীপনা সৃষ্টি করে শরীরে উচ্চ রক্তচাপের অবস্থা তৈরি করে।

ব্যায়াম করা

ধীরে ধীরে শুরু করা। প্রতি সপ্তাহে ১৫০ মিনিট মাঝারি  এবং ৭৫ মিনিট জোরালো অ্যারোবিক ব্যায়াম করা।প্রতি সপ্তাহে দিন বা তার বেশি  শক্তি বৃদ্ধির ব্যায়াম করা।ফ্রি হ্যান্ড ব্যায়াম করা যায়।

খারাপ কোলেস্টেরল কমানো

শরীরের LDL বা ক্ষতিকর কোলেস্টেরল কমিয়ে HDL বা  উপকারী কোলেস্টেরল স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করা।অস্বাস্থ্যকর তেল,চর্বি জাতীয় খাবার খাদ্যতালিকা থেকে বাদ দেয়া।বাইরের ভাজা পোড়া খাওয়া বর্জন করা

ধূমপান, তামাক বর্জন

ধূমপান,তামাক বর্জন করা উচিত ।এর নিকোটিন রক্তপ্রবাহে প্রবেশ করে রক্তনালীর দেয়ালে প্রদাহের সৃষ্টি করে।যার  ফলে রক্তনালীর দেয়াল পুরু হয়ে রক্তচাপ বৃদ্ধি করে।

অ্যালকোহল বর্জন

অ্যালকোহলযুক্ত পানীয় পান বর্জন করা উচিত ।অ্যালকোহল শারীরিক নানারকম ক্ষতিসাধন করে। কিডনি,লিভারের উপর চাপ সৃষ্টি করে। যার ফলে শরীরের সাম্যাবস্থা ব্যাহত হয়।উচ্চ রক্তচাপের কারণ হয়ে দাঁড়ায়।

অনিদ্রার সমাধান

সমস্যা থাকলে অনিদ্রা থেকে বেঁচে থাকার উপায় বের করা।কোনো রোগের জন্য অনিদ্রার সমস্যা হলে সেই রোগের চিকিৎসা করা। প্রতিদিন পরিমিত পরিমাণে ঘুমানো|

চিন্তামুক্ত থাকা

নিজেকে চিন্তা মুক্ত রাখলে উচ্চ রক্তচাপের প্রবণতা কমে যায়।প্রয়োজনে ধ্যান করা, বেশি বেশি সালাত আদায় করা, বিভিন্ন সমাজ সেবামূলক কর্মকান্ডে অংশগ্রহণ করা।

অলসতা ত্যাগ

অলসতা ত্যাগ করে কর্ম মুখর ওয়া।শুধু শুধু বসে না থেকে ভালো কাজ করা। এতে শরীর মন দুটোই ভালো থাকে। শরীরের রক্তচাপ বাড়ে না।প্রতিদিন বসে থাকার সময় কমানো রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে।

ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রন

ডায়াবেটিস অনিয়ন্ত্রিত থাকলে নিয়ন্ত্রন করা।এর ফলে উচ্চ রক্তচাপের প্রবণতা কমে যায়।

সক্রিয় থাকা

শারীরিকভাবে বেশি সক্রিয় থাকা, যার মধ্যে থাকতে পারে হাঁটা, দৌড়ানো, সাঁতার কাটা বা ওজন তোলার মতো শক্তি বৃদ্ধিকারী কার্যকলাপ।

অস্বাস্থ্যকর চর্বি বর্জন

স্যাচুরেটেড বা ট্রান্স ফ্যাট সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকা উচিত

রক্তচাপ কমানোর জন্য ওষুধ

চার শ্রেণীর রক্তচাপের ওষুধ হল সবচেয়ে কার্যকর :

অ্যাঞ্জিওটেনসিন-রূপান্তরকারী এনজাইম (ACE) ইনহিবিটর

অ্যাঞ্জিওটেনসিন হরমোনের উৎপাদনকে বাধা দেয়। যখন ওষুধটি অ্যাঞ্জিওটেনসিন ব্লক করে, তখন রক্তনালীগুলি সংকুচিত হয় না। রক্তনালী সংকুচিত না হলে রক্তচাপ বাড়তে পারে না। ফলে শরীর স্বাভাবিকভাবেই উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের করে ফেলে

অ্যাঞ্জিওটেনসিন রিসেপ্টর ব্লকার (ARBs)

রক্তনালীতে রিসেপ্টরগুলির সাথে আবদ্ধ হতে এই একই হরমোনকে বাধা দেয়। ARBs রক্তনালীগুলিকে সংকুচিত হতে বাধা দেয়। ফলে রক্তচাপ বাড়তে পারে না কমে যায়।

ক্যালসিয়াম চ্যানেল ব্লকার

হৃদপিণ্ড এবং রক্তনালীগুলির পেশী কোষে ক্যালসিয়াম প্রবেশ করতে বাধা দেয়।ফলে হৃদপিণ্ড শিথিল হয়ে যায়। পরবর্তী পর্যায়ে দ্রুত রক্ত পাম্প না করে স্বাভাবিক নিয়মে তার কাজ পরিচালনা করতে থাকে। এবং  ধমনীগুলিও শিথিল হয়ে পড়ে।

ডায়ইউরেটিকস

শরীর থেকে অতিরিক্ত সোডিয়াম বের করে দেয়, রক্তে তরলের পরিমাণ হ্রাস করে। সোডিয়াম কম থাকায় রক্ত চাপ স্বাভাবিক হয়ে যায়।

পরিসংখ্যান

বিশ্বব্যাপী ৩০-৭৯ বছর বয়সী আনুমানিক .২৮ বিলিয়ন প্রাপ্তবয়স্কদের উচ্চ রক্তচাপ রয়েছে, যাদের বেশিরভাগ (দুই-তৃতীয়াংশ) নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশে বসবাস করে।

উপসংহার

উচ্চ রক্তচাপ রোগ থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য প্রয়োজন সচেতনতা, নিয়মিত চেকআপ এবং স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস। এর কারণ লক্ষণ সম্পর্কে জানলে তা প্রতিরোধ সহজ হয়। ঘরোয়া উপায়ে নিয়মিত যত্ন নিলে অনেক ক্ষেত্রেই ওষুধের প্রয়োজন পড়ে না। অবহেলা না করে এখনই উচ্চ রক্তচাপ নিয়ে সচেতন হন।

FAQ

পুরুষ না মহিলা কাদের উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা বেশি? ?

পুরুষ

মধ্যবয়স পর্যন্ত মহিলাদের তুলনায় পুরুষদের উচ্চ রক্তচাপ হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।

মহিলা

বয়স্কদের ক্ষেত্রে, পুরুষদের তুলনায় মহিলাদের উচ্চ রক্তচাপ হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।

প্রিক্ল্যাম্পসিয়া কি??

প্রিক্ল্যাম্পসিয়া হল গর্ভাবস্থার রোগ। এর ফলে হঠাৎ উচ্চ রক্তচাপ হয়। কিডনি এবং লিভারের সমস্যা সৃষ্টি করে।

সবদেশেই কি উচ্চ রক্তচাপের মাপের সীমা এক???

না। যেমন :  যুক্তরাষ্ট্রে, ১৩০ mmHg/ ৮০ mmHg রক্তচাপকে উচ্চ রক্তচাপ হিসেবে সংজ্ঞায়িত করেন।

ইউরোপে, ১৩০ mmHg/ ৮০ mmHg রক্তচাপকে উচ্চ রক্তচাপ হিসেবে সংজ্ঞায়িত করেন।

আমার উচ্চ রক্তচাপ হয়েছে কিনা বুঝবো কিভাবে?

একমাত্র উপায় নিয়মিত রক্তচাপ মাপা।উচ্চ রক্তচাপ থাকলে আপনি অসুস্থ বোধ করবেন না। কোনো লক্ষণ নাও থাকতে পারে আপনার তাই নিয়মিত চেক আপ করুন।

বাচ্চাদের উচ্চ রক্তচাপ হতে পারে???

হ্যাঁ,বাচ্চাদেরও উচ্চ রক্তচাপ হতে পারে। তাদের উচ্চ রক্তচাপ কিডনি বা হৃদপিণ্ডের সমস্যার কারণে হতে পারে। আবার অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস এর জন্য হতে পারে।

উচ্চ রক্তচাপকে নীরব ঘাতক বলা হয় কেন?

কারণ সাধারণত উচ্চ রক্তচাপের কোনও লক্ষণ থাকে না। বছরের পর বছর মানুষের শরীরের কোন লক্ষণ প্রকাশ না করেই নীরবে থেকে যেতে পারে। যা একসময় মৃত্যুর কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url