ওমিক্রন ফিরে এসেছে: লক্ষণ, সাবধানতা ও চিকিৎসা

 ওমিক্রন ফিরে এসেছে: লক্ষণ, সাবধানতা ও চিকিৎসা

ওমিক্রন দড়জায় কড়া নাড়ছে

ওমিক্রনের মতো করোনা ভাইরাসের ধরনগুলো মনে করিয়ে দেয় যে, কোভিড-১৯ মহামারী এখনও শেষ হয়ে যায়নি। বাংলাদেশে ২০২০ সালের মার্চের তারিখে প্রথম কোভিড-১৯ শনাক্ত হয় এরপর দেশে ২০ লাখ ৫১ হাজারের বেশি আক্রান্ত হয়েছে এবং ২৯,৪৯৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিয়েছে যেন সব বন্দরগুলোতে (স্থল, নদী বিমান) স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয়। নজরদারি ব্যবস্থাও জোরদার করা হয়েছে। উদ্দেশ্য হলো করোনাভাইরাসের নতুন উপ-ধরনবিশেষ করে ওমিক্রন এলএফ. (LF.7), এক্সএফজি (XFG), জেএন. (JN.1), এবং এনবি... (NB.1.8.1) শনাক্ত করে সংক্রমণ রোধ করা। যেগুলো ভারতসহ প্রতিবেশী দেশগুলোতে শনাক্ত হয়েছে।

ইতিহাস

ওমিক্রন (B.1.1.529) হল SARS-CoV-2 (severe acute respiratory syndrome coronavirus 2) এর একটি রূপ যা প্রথম বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) কে ২৪ নভেম্বর ২০২১ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার নেটওয়ার্ক ফর জিনোমিক্স সার্ভিল্যান্স দ্বারা রিপোর্ট করা হয়েছিল। প্রথম নিশ্চিত নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছিল নভেম্বর ২০২১ সালে দক্ষিণ আফ্রিকায় এবং নভেম্বর বতসোয়ানায়। ২০২১ সালের ২৬ নভেম্বরে, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা B.1.1.529 কে গ্রীক অক্ষর omicron নামকরণ করে।

ওমিক্রন কি

ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্ট করোনাভাইরাসের একটা মিউটেন্ট রূপ যা বর্তমান বিশ্বে covid 19 এর ডমিনেন্ট ভ্যারিয়েন্ট।২০২১ সালে প্রথম চিহ্নিত হবার পর থেকে ওমিক্রনের অনেক উপ ভ্যারিয়েন্ট খুঁজে পাওয়া গেছে ।২০২৩ সালের এপ্রিল হিসেবে বিশ্বব্যাপি ডমিনেন্ট এবং সবচেয়ে সংক্রামক হিসেবে ওমিক্রনের XBB.1.5 উপ ভ্যারিয়েন্ট কে চিহ্নিত করা হয়েছে ।কারণ তারা সহজে এবং দ্রুত rগতিতে ছড়িয়ে পড়ে

ওমিক্রনের সংক্রমণ

লক্ষণ প্রকাশের ৪৮ ঘন্টা পুর্বে এবং প্রকাশের পর দিন রুগী সবচেয়ে বেশি সংক্রমিত করে থাকে।তারপর থেকে সংক্রমণ ক্ষমতা কমে যায়।

লক্ষণ

  • শরীরে ব্যথা
  • কাশি
  • অজ্ঞান হয়ে যাওয়া
  • ক্লান্তি
  • জ্বর
  • মাথাব্যথা
  • গন্ধ বা স্বাদ হ্রাস পাওয়া
  • পেশি ব্যথা
  • নাক বন্ধ হওয়া
  • নাক দিয়ে পানি পড়া
  • রাতের ঘাম
  • উপরের শ্বাস নালীর সংক্রমণ
  • ত্বকে ফুসকুড়ি
  • হাঁচি
  • গলা ব্যথা
  • কিন্তু কিছু ক্ষেত্রে কোনো লক্ষণ থাকে না।

কতদিন স্থায়িত্ব

ওমিক্রনের লক্ষণ কয়েক দিন থেকে কয়েক সপ্তাহ পর্যন্ত থাকতে পারে তবে এটা কিছু বিষয়ের উপর নির্ভর করে যেমন বয়স, ভ্যাকসিন স্ট্যাটাস এবং অন্য শারীরিক রোগের উপর।সাধারণত যুবক বয়স এবং যারা ভ্যাকসিন নিয়েছে তাদের মধ্যে অল্প সময়ের জন্য লক্ষণ দেখা যায়। কিছু ক্ষেত্রে রুগীর দীর্ঘ সময়ের লক্ষণ থাকতে পারে এই পরিস্থিতিকে দীর্ঘ covid বলে।এই দীর্ঘ covid এর লক্ষণ প্রকাশ থাকার বাধাধরা সময় নেই তবে কয়েক সপ্তাহ থেকে কয়েক মাস পর্যন্ত থাকতে পারে।এমন হলে অতি দ্রুত নিকটস্থ ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

নির্ণয়

ডাক্তার রা সাধারণত ওমিক্রন নির্ণয় করার জন্য PCR test করে থাকে।যা রুগীর নাক বা গলার নমুনাতে ভাইরাসের জীনের উপস্থিতির মাধ্যমে নিশ্চিত করা হয়।অনেক সময় Rapid Antigen test করা হয় তবে তা PCR test এর মতো নির্ভরযোগ্য নয়।

সাবধানতা

  • নাক এবং মুখ ঢেকে রাখে এমন মাস্ক পরতে হবে। মাস্ক পরা বা খুলার সময় হাত পরিস্কার রাখতে হবে।
  • কমপক্ষে মিটার শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখতে হবে।
  • কম বায়ু প্রবাহ বা জনসমাগম বেশি রয়েছে এমন জায়গা পরিহার করতে হবে।
  • ঘরের ভিতরে বায়ু প্রবাহ স্বাভাবিক রাখতে জানালা খুলে রাখতে হবে।
  • নিয়মিত সাবান দিয়ে হাত পরিষ্কার করতে হবে।
  • সঠিক সময়ে টিকা নিতে হবে।

চিকিৎসা

  • ব্যথার ঔষধ নেয়া যেমন paracetamol, ibuprofen or naproxen
  • বিশ্রাম নেয়া
  • পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করা
  • কাশির ঔষধ নেয়া এবং কাশি হলে শুয়ে থাকার চেয়ে সোজা হয়ে বসা
  • ভিটামিন সি সমৃদ্ধ ফল শাকসবজি খাওয়া
  • পর্যাপ্ত পরিমাণে প্রোটিন খাওয়া
  • খাবারের সাথে ভিটামিন ডি নেয়া
লক্ষণ খারাপের দিকে চলে যেতে থাকলে অথবা কোনো জিজ্ঞাসা থাকলে নিকটস্থ ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা

এখনো নিশ্চিত ভাবে জানা যায়নি ভ্যাকসিন নতুন ওমিক্রন (B.1.1.529) ভ্যারিয়েন্টের উপর কিভাবে কাজ করবে। তবে গবেষণা চলমান রয়েছে ভাইরাসের ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্ট ভ্যাকসিন রেজিস্ট্যান্ড কিনা জানার জন্য।

 

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url