ডেঙ্গু: কিভাবে ছড়ায়, কী লক্ষণ ও ঘরোয়া প্রতিকার

 ডেঙ্গু: কিভাবে ছড়ায়, কী লক্ষণ ও ঘরোয়া প্রতিকার

ডেঙ্গু প্রাপ্তিস্থান

ভূমিকা

 প্রতি বছর বর্ষার মৌসুমে ডেঙ্গু জ্বর ভয়াবহ রূপ নিয়ে আমাদের জনস্বাস্থ্যকে হুমকির মুখে ফেলে। ডেঙ্গু শুধু একক কোনো ব্যক্তির সমস্যা নয়, এটি পুরো সমাজের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ।সামান্য অসাবধানতা প্রাণঘাতী হতে পারেজেনে নিন ডেঙ্গু সম্পর্কে বিস্তারিত।

 কি

 ডেঙ্গু, ডেঙ্গু জ্বর নামেও পরিচিত। এটি এক ধরনের ভাইরাস জনিত, মশা বাহিত সংক্রমণ রোগ।গ্রীষ্মমন্ডলীয় এবং উপক্রান্তীয় জলবায়ুতে বেশি দেখা যায়।

 ধরন

 প্রজাতির ভিত্তিতে প্রকার

  •  ডেঙ্গু-
  •  ডেঙ্গু-
  •  ডেঙ্গু-
  •  ডেঙ্গু-

 তীব্রতার ভিত্তিতে ধরন

  •  সাধারণ ডেঙ্গু
  •  তীব্র ডেঙ্গু বা ডেঙ্গু হেমোরেজিক জ্বর বা ডেঙ্গু শক সিনড্রোম

 কখন বেশি

ডেঙ্গু ভাইরাস বহনকারী মশা ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি সক্রিয় থাকে, তবে তারা রাতেও কামড়াতে পারে।

 প্রাপ্তিস্থান

 গ্রীষ্মমন্ডলীয় এবং উপ-ক্রান্তীয় অঞ্চলে বেশি পাওয়া যায় যার মধ্যে রয়েছে:

  •  আফ্রিকা এবং এশিয়ার কিছু অংশ
  •  মধ্য দক্ষিণ আমেরিকা
  •  ক্যারিবিয়ানঅঞ্চল
  •  প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপপুঞ্জ
  •  উত্তর আমেরিকার দক্ষিণ অঞ্চল

 সংক্রমণ

 ডেঙ্গু ভাইরাস মানুষের মধ্যে সংক্রামিত হয় মূলত স্ত্রী এডিস এজিপ্টি মশার কামড়ের মাধ্যমে, যা জিকা এবং চিকুনগুনিয়ার মতো ভাইরাসও বহন করে। ডেঙ্গু ব্যক্তি থেকে ব্যক্তিতে সংক্রামক নয় ফ্লুর মতো, যদি না এটি গর্ভবতী মহিলার কাছ থেকে তার সন্তানের মধ্যে সংক্রামিত হয়।

 কারা বেশি ঝুঁকিতে

  •  বাচ্চা
  •  বয়স্ক
  •  গর্ভবতী
  •  যাদের প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল
  •  কিছু স্বাস্থ্যগত সমস্যা আছে, যেমন হাঁপানি, ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ অথবা এমন কোনও অবস্থা যার কারণে সহজে রক্তপাত  হয়
  •  অতীতে যাদের ডেঙ্গু হয়েছে
  •  গ্রীষ্মমন্ডলীয় এবং উপ-ক্রান্তীয় অঞ্চলে বসবাসকারী ভ্রমণকারীরা

 লক্ষণ

সাধারণ ডেঙ্গু

ডেঙ্গু আক্রান্ত রুগীদের বেশিরভাগের হালকা বা কোনও লক্ষণ দেখা যায় না এবং - সপ্তাহের মধ্যে সুস্থ হয়ে যায়। খুব কম ক্ষেত্রেই, ডেঙ্গু তীব্র হয় বা মৃত্যু ঘটে। লক্ষণ দেখা দিলে, সাধারণত সংক্রমণের -১০ দিন পর থেকে শুরু হয় এবং - দিন স্থায়ী হয়। লক্ষণগুলির হল :

  •  তীব্র জ্বর (৪০°C/১০৪°F)
  •  ব্যথা  (চোখের ব্যথা, সাধারণত চোখের পিছনে, পেশী, জয়েন্ট বা হাড়ের ব্যথা,তীব্র মাথাব্যথা)
  •  ফুসকুড়ি
  •  বমি বমি ভাব
  •  গ্রন্থি ফুলে যাওয়া
  •  দুর্বলতা, অস্বস্তি এবং অলসতা
  •  স্বাদ পরিবর্তন হয়ে যাওয়া
  •  ক্ষুধাহীনতা
  •  গলা ব্যথা


ডেঙ্গু জ্বর

তীব্র ডেঙ্গু

দ্বিতীয়বার সংক্রামিত ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে তীব্র ডেঙ্গুর ঝুঁকি বেশি থাকে। জ্বর চলে যাওয়ার পরে প্রায়শই তীব্র ডেঙ্গুর লক্ষণ যায় :

  •  ক্লান্তি লাগা
  •  অস্থিরতা বোধ করা
  •  ক্রমাগত বমি
  •  তীব্র শ্বাসকষ্ট
  •  তীব্র পেটে ব্যথা
  •  তীব্র পিপাসা লাগা
  •  বমি বা মলের সাথে রক্ত আসা
  •  দুর্বলতা বোধ করা
  •  ফ্যাকাশে ঠান্ডা ত্বক
  •  মাড়ি বা নাক দিয়ে রক্ত আসা

 এই তীব্র ডেঙ্গুর লক্ষণযুক্ত ব্যক্তিদের অবিলম্বে চিকিৎসা নেওয়া উচিত। সুস্থ হবার পর, ডেঙ্গুতে আক্রান্তরা কয়েক সপ্তাহ ক্লান্ত বোধ করতে পারে।

 প্রতিরোধ

 মশার কামড় থেকে নিজেকে রক্ষা করার জন্য পদক্ষেপ সমূহ :

  •  শরীরের সবচেয়ে বেশি অংশ ঢাকতে পারে এমন বড় পোশাক পরা। যেমন: - লম্বা হাতা শার্ট, লম্বা প্যান্ট, মোজা এবং জুতা।
  • দিনের বেলায় যথাসম্ভব মশারি ব্যবহার করা
  • EPA-নিবন্ধিত পোকামাকড়, মশা নিরোধক (DEET, Picaridin বা IR3535 ) প্রয়োগ করা।
  • পর্দার ছিদ্র মেরামত করা এবং সম্ভব হলে জানালা এবং দরজা বন্ধ রাখা।

 মশার বংশবৃদ্ধি রোধ করতে পদক্ষেপ সমূহ :

  •  বাড়ির বাইরের পানি সংরক্ষণের পাত্র সমূহে, ডিম পাড়তে পারে এমন জায়গায় উপযুক্ত কীটনাশক প্রয়োগ করে।
  • পানি জমার জায়গা (বালতি বা ব্যারেল, বৃষ্টির পানি ধরে রাখতে পারে এমন পুরানো টায়ার) সরিয়ে ফেলা এবং পানি জমে থাকা নিচু জায়গাগুলি পূরণ করা।
  • সপ্তাহে কমপক্ষে বার বাড়ি পরিষ্কার করা। ফুলের টব সহ পানি জমার পাত্রগুলো পরিষ্কার করা।

  অন্যান্য

 গর্ভবতী হলে বা ভ্রমণের প্রয়োজন পড়লে গন্তব্যস্থলে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব আছে কিনা তা জানা বা থাকলে ভ্রমণ  এড়িয়ে চলা।

 ঘরোয়া প্রতিকার

  •  ডেঙ্গুর কোন চিকিৎসা নেই।
  •  প্রচুর পরিমাণে পানি এবং তরল পান করে নিজেকে হাইড্রেটেড রাখা।
  •  যত বেশি সম্ভব বিশ্রাম নেওয়া।
  •  ব্যথার জন্য শুধুমাত্র অ্যাসিটামিনোফেন (যেমন টাইলেনল,প্যারাসিটামল) খাওয়া
  •  আইবুপ্রোফেন এবং অ্যাসপিরিনের মতো নন-স্টেরয়েডাল অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি ওষুধ এড়িয়ে চলা, কারণ এতে রক্তপাতের ঝুঁকি বাড়ে।
  •  তীব্র ডেঙ্গুর লক্ষণ দেখা দিলে আক্রান্ত ব্যক্তিকে দ্রুত নিকটস্থ ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করা

 জটিলতা

 তীব্র ডেঙ্গু জ্বরের ক্ষেত্রে নিম্নলিখিত জটিলতা দেখা দেয় :

 গর্ভাবস্থায় ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত মহিলাদের শিশুদের নিম্নলিখিত জটিলতা দেখা দেয় :

  •  শিশুদের অকাল জন্ম
  •  কম ওজন নিয়ে জন্ম
  •  ভ্রূণের সমস্যা

 ডেঙ্গু জ্বর কতো বার হতে পারে

 কমপক্ষে চার প্রকার (প্রজাতি) এর ডেঙ্গু ভাইরাস থাকার কারণে, একাধিকবার ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হতে পারে। এক ধরণের ভাইরাসে আক্রান্ত হলে তার বিরুদ্ধে শরীরে  রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি হয় এবং পরবর্তীতে সেই ধরনটা আক্রমন করলে তা আর হয় না। কিন্তু অন্য তিনটি প্রজাতির যেকোনো একটিতে আক্রমণ করলে  আক্রান্ত হতে পারে।

টিকা

দুই ধরনের  টিকা পাওয়া যায়। ডেঙ্গু জ্বরের টিকা থেকে ৬০ বছর বয়সীদের জন্য পাওয়া যেতে পারে। এই টিকা দুই বা তিন ডোজের একটি সিরিজ এই টিকাগুলি সেইসব লোকদের জন্য  যারা ডেঙ্গু ভাইরাসের বিস্তার রোধ করে এমন জায়গায় বসবাস করেন এবং যাদের অন্তত একবার ডেঙ্গু জ্বর হয়েছে।

 পরিসংখ্যান

গবেষণায় দেখা গেছে যে বিশ্বে প্রতি বছর প্রায় ৪০ কোটি মানুষ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়, কিন্তু বেশিরভাগের (প্রায় ৮০%) কোনও লক্ষণই দেখা থাকে না।

 উপসংহার

 সার্বিকভাবে বলা যায়, ডেঙ্গু জ্বর শুধু ব্যক্তিগত রোগ নয়, বরং একটি সামাজিক জনস্বাস্থ্য ইস্যু।তাই বাসা আশেপাশের পরিবেশ পরিচ্ছন্ন রেখে এডিস মশার বংশ বিস্তার রোধই একমাত্র দীর্ঘমেয়াদী সমাধান।শুধু নিজেকে নয়, প্রতিবেশীকেও সচেতন করুন। ডেঙ্গু প্রতিরোধে গণসচেতনতার কোন বিকল্প নেই।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url